চিকিৎসায়ও মিলছে না সুফল

নরসিংদীতে বাড়ছে বাছুরের 'পা ফোলা' রোগ

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০

আমজাদ হোসেন, নরসিংদী
নরসিংদীতে 'পা-ফোলা' রোগে আক্রান্ত একটি বাছুর -যাযাদি
নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করেই ব্যাপক হারে বাড়ছে গরু-বাছুরের 'পা-ফোলা' রোগ। বিশেষ করে কম বয়সের বাছুর আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা করেও মিলছে না তেমন সুফল। নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি এবং কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর কোরবানি ঈদের পর এফএমডি বা ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের মতো নরসিংদীতেও বহু গরুর বাছুর মারা গিয়েছিল। বিশেষ করে তিন মাসের কম বয়সি বাছুর মারা গেছে বেশি। হাজার হাজার টাকা চিকিৎসক এবং ওষুধের পেছনে খরচ করেও বাঁচানো যায়নি আক্রান্ত দুধের ছোট ছোট বাছুর। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক এবং খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই ক্ষতির রেশ না কাটতেই নতুন করে দেখা দিয়েছে বাছুরের 'পা-ফোলা' রোগ। এ রোগে ছোট বাছুর গরু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রাথমিক লক্ষণে দেখা যায়, বাছুরের সামনের ডান পা হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় এবং দুই-তিন দিনের মধ্যেই পায়ের মাংসপেশিতে ফোস্কা হয়ে রক্তাক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত পা অচল হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না। বেশির ভাগ সময় শুয়ে থাকে এবং আক্রান্ত পা বাঁকা করতে না পেরে সামনের দিকে সোজা করে রাখে। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ডৌকারচর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের কৃষক নূরে আলম জানান, তার একটি বাছুর প্রায় এক মাস ধরে অসুস্থ। বাছুরের সামনের একটি পা ফুলে অচল। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ টাকার ওষুধ খাইয়েছেন। তবুও পুরোপুরি সুস্থ করতে পারছেন না। একই গ্রামের আবিদা অ্যাগ্রো লিমিটেডের মালিক আবিদা আরমিন জানিয়েছেন, গত বছর কোরবানি ঈদের পর তাদের খামারে ছোট-বড় সাতটি গরু এফএমডি বা ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। বড় গরুগুলো সুস্থ হয়ে উঠলেও ছোট দুধের দু'টি বাছুর বাঁচানো যায়নি। প্রায় ৩ হাজার টাকা ওষুধের পেছনে খরচ করেও বাছুর দুটোকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। বাছুর দুটোর বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এমন ক্ষতির রেশ না কাটতেই গত এক সপ্তাহ যাবত সাত মাস বয়সের একটি ষাঁড় বাছুর 'পা-ফোলা' রোগে আক্রান্ত হয়েছে। খামারের মালিক জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা করেও খুব একটা সুফল মিলছে না। অসুস্থ বাছুর পা খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আক্রান্ত পায়ের ফোলা স্থানে কোথাও কোথাও ফোস্কা হয়ে রক্তাক্ত হচ্ছে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক, জ্বর, ব্যথা এবং বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও দেখা যাচ্ছে খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ অসুস্থ প্রাণীর রোগের লক্ষণ বা নমুনা হলো বাছুরের 'পা-ফোলা'। এই রোগের চিকিৎসাসেবা নিতে আসা লোকের সংখ্যাই বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. ছাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুনাইদ ইবনে হামিদ নাঈম বলেন, এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত নতুন রোগ। নরসিংদীতে আগে কখনো এ রোগ হয়নি। লাম্পিং স্কিন ডিজিজে প্রাণীর শরীরে গুটি গুটি ক্ষত তৈরি হয়। কিন্তু পা ফুলে যাওয়ার বিষয়টি নতুন। এর প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে অন্তত আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। তারা বলেন, নরসিংদীতে হঠাৎ করেই এ রোগ বাড়ছে। তবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েনি। আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু একেবারে মারা যাচ্ছে না।