শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব

ঘরবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত লাখো মানুষ পানিবন্দি

দীঘিনালা ও নানিয়ারচরে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
স্বদেশ ডেস্ক
  ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ডুবে যাওয়া বসতঘর -যাযাদি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূল এলাকাসহ দেশজুড়ে চলছে রাত-দিন বৃষ্টি ও দমকা ঝড়ো হাওয়া। বিভিন্ন এলাকায় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ের তান্ডবে শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। উপরে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। নিচু এলাকা পস্নাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। এদিকে, দুর্যোগ মোকাবিলায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ২১টি এবং রাঙামাটির নানিয়ারচরে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠনো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপজেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বাতাসের গতিবেগ বেড়ে গিয়ে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বাইরে শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। উপরে গেছে অসংখ্য গাছপালা। সোমবারও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১২ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। এতে এলাকার শত শত মালিকের মৎস্য ঘের ডুবে গিয়ে ভেসে গেছে কয়েক লাখ টাকার মাছ।

এদিকে, উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের নেওয়াপাড়া গ্রামে ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত পাঁচটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে পানি। গত রোববার রাতে বাতাসের গতিবেগ এবং নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। অধিকাংশ মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবে রোববার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে মো. শরিফুল (২৭) ফুপুকে পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় জোয়ারের পানিতে হারিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।

অন্যদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মুহিববুর রহমান বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনও শুকনা খাবার এবং প্রয়োজনীয় আশ্রয়ণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। জীবনহানির কোনো খবর না পেলেও মানুষের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় বাড়িতে রান্নাঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বসতঘরের মেঝে তলিয়ে ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু নিয়ে চরম দূরবস্থায় মানুষ। অনেক ঘরে রান্না হয়নি। যারা সাইক্লোনসেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন তারা প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু শুকনো খাবার পেলেও যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি তাদের অবস্থা করুণ।

শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পরিবারগুলো। অনেক মুরব্বির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এত দীর্ঘ সময় ধরে ঝড় চলতে এর আগে কখনো দেখেননি। গত রোববার রাত ১১ থেকে ঝড় শুরু হয়ে সোমবার দুপুর ২-৪০ মিনিট পর্যন্ত একটানা পুরাদমে ঝড় চলে। রাতে অনেক ঘরে পানি প্রবেশ না করলেও দুপুরে সব ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। স্থানীয় বাজারের দোকানগুলোতে পানি প্রবেশ করায় দোকান মালিকরা তাদের দোকান বন্ধ রাখেন। পানি জমে তাদের মারামাল নষ্ট হচ্ছে। সরকারিভাবে ত্রাণ সহাযতা প্রয়োজন বলে জানান সাধারণ মানুষ।

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার মধ্যরাত থেকে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারেও শুরু হয়েছে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ এবং দমকা হাওয়া। ফলে সোমবার অনেকেই দোকানপাট খুলতে পারেননি। থমকে গেছে এলাকাবাসীর দৈনন্দিন কাজকর্ম।

আড়াইহাজার একটি কৃষি ও শিল্পপ্রধান এলাকা। অনেক কৃষকের বোরো ধান এখনো কাটা বাকি রয়েছে। অনেকে ধান কেটে জমিতে স্তূপাকারে রেখে দিয়েছেন। বাড়িতে আনতে পারেননি। আবার অনেকে ধান কেটে বাড়িতে আনলেও সিদ্ধ করা এবং শুকানো বাকি রয়েছে। থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় ঘন ঘন হচ্ছে বিদু্যৎ বিভ্রাট। ফলে কল কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শ্রমিক কাজে যোগদান করতে পারেননি।

অন্যদিকে পৌরবাজারের অধিকাংশ দোকানপাট রয়েছে বন্ধ। অফিসগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি কম। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজনের ভিড় কম।

সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টির তেমন বিরাম ছিল না। দুপুরে একটু সূর্যের মুখ দেখা গেলে লোকজনের মধ্যে একটু আশার সঞ্চার হলেও একটু পরই আবার শুরু হয় বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করছিল।

দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় চলমান দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গত রোববার বিকালে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা শেষে এই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। উপজেলার মেরুং, বোয়ালখালী, কবাখালী, দীঘিনালা ও বাবুছড়াসহ পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরুরি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মোট ২১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে এবং যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের সেবা নিয়ে প্রস্তুত উপজেলা প্রশাসন।

এ ছাড়া উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, চলমান দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ২১টি নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নানিয়ারচর (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় রাঙামাটি নানিয়ারচর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউএনও আমিমুল এহসান খান।

সভায় বলা হয়, নানিয়ারচরের চারটি ইউনিয়নের ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্ব স্ব ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিকে প্রচারণা করতে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও আমিমুল এহসান খান। এ সময় উপজেলায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতা করছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শুপ্তশ্রী শাহা।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- নিম্ন ক্যাংগালছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাহানাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নানিয়ারচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাতাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নানিয়ারচর পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িঘাট বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িঘাট পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘিলাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরযুক্ত একটি বার্তায় বলা হয়েছে, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, বান্দরবান পাহাড়ি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো হয়েছে। এমনকি পাহাড়ের কিছু কিছু এলাকায় ধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে