হতদরিদ্র পরিবার থেকে ওঠে আসা রেক্সনা ইউপি সদস্য
প্রকাশ | ২৭ মে ২০২৪, ০০:০০
মিজানুর রহমান মিঠু, বাগেরহাট সদর
আমাদের সমাজ এখনো পুরোপুরি নারীবান্ধব নয়। 'নারী-পুরুষ সমান অধিকার' ট্যাগলাইন হাতে নিয়ে এখনো নারীদের হাঁটতে হয় তার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জাঁতাকলে বহু নারীই নিজেকে গুটিয়ে নেন এক কোনে। কিন্তু কেউ কেউ আবার শত প্রতিবন্ধকতা ঠেলে সোচ্চার হন অধিকার আদায়ে, ছিনিয়ে আনেন সফলতা নামের সোনার হরিণ। তেমনি এক লড়াকু নারী অপরাজিতা রেক্সনা বেগম, যিনি বর্তমানে ইউপি সদস্য।
১৯৮৪ সালে ২৫ অক্টোবর এক হতদরিদ্র পরিবারে অপরাজিতা রেক্সনা বেগমের জন্ম। জন্মের ৩ মাস পর তার পিতা মারা যান। তার পর থেকে নানাবাড়ি থেকে বড় হন। রেক্সনার বয়স যখন দুই বছর তখন তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করে তাকে নানাবাড়ি রেখে চলে যান। নানাবাড়ি থেকে পড়াশোনা করেন। কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর তাকে আর লেখাপড়া করতে দেওয়া হয়নি। স্বামীর বাড়িতে তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করেন।
এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের বিপদে-আপদে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। তাতেও পরিবার থেকে অনেক ধরনের কথা শুনতে হতো। তিনি অন্যের ধান কাটা, মাটি কাটা, বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, এলাকায় মানুষ মারা গেলে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, বিপদে পড়লে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। এই কাজগুলো অনেকেই পছন্দ করতেন। এই কাজ করতে করতে তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
বাগেরহাট সদর উপজেলা বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে রেক্সনা বেগম ২০১৯ সালে উন্নয়ন সহযোগী রূপান্তরের 'অপরাজিতা : নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' প্রকল্পে চডজ অপরাজিতা হিসেবে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হন। উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের কাজ করতেন। অসহায় দরিদ্র নারীদের বিনামূল্যে দর্জি প্রশিক্ষণ দিতেন। অসহায় নারীদের বিনামূল্যে পোশাক বানিয়ে দিতেন। তিনি একজন সফল হাঁস-মুরগি পালনকারীও ছিলেন।
অপরাজিতা রেক্সনা বেগম নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অপরাজিতা ও স্থানীয় জনগণ তাকে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শকে সাধুবাদ জানিয়ে নির্বাচনীয় প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনে অনেক বাধাবিপত্তি আসে। তার পরও তিনি থেমে থাকেননি। এবং নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।