প্রকল্পের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বরিশাল ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। মালামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবার শুরু হলেও দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ তিন বছরে হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে এ প্রকল্পের ব্যয় একশ' কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্মাণ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরও দুই বছর।
গণপূর্ত বরিশাল সার্কেল অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশালসহ দেশের ৮ বিভাগে এক যোগে নির্মাণ শুরু হয় ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল। বরিশাল শের-ই-বাংলা হাসপাতাল ক্যাম্পাস সংলগ্ন ২০২১ সালে ২ লাখ ৭২ হাজার বর্গফুটের ১৭ তলাবিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। যার দুই তলা মাটির নিচে, আর বাকি ১৫ তলা মাটির উপরে। ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে ভবন হস্তান্তরের কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বঙ্গ বিল্ডার্স ও মেসার্স খান বিল্ডার্স (জেভি) ২০২৪ সালের মে মাসে এসেও ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। এ তিন বছরে ভবনের মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ১৭টি ছাদের মধ্যে মাত্র ৯টি ছাদ দিতে সমর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ভবনের দৃশ্যমান কাজ শেষ হয়েছে আরও অনেক আগেই। মাঝে কয়েকমাস কাজ বন্ধ ছিল। ঠিকাদার বিল না পাওয়ায় কাজ করতে পারছিল না বলে জানান ওই কর্মচারীরা। এদিকে গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ঠিকাদারকে এ পর্যন্ত ২৮ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি যদি নির্ধারিত সময়ে কাজ করতেন তবে পুরো টাকাই দেওয়া সম্ভব ছিল। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বরাদ্দ ফেরত চলে গেছে। তবে আবারও একনেকের বৈঠকে বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। এবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১২৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়েছে। নতুন বরাদ্দ টাকা চলে আসলেই প্রকল্পের বাকি কাজ শুরু হবে বলে জানান ওই প্রকৌশলীরা।
এ ব্যাপারে জানতে খান বিল্ডার্সের স্বত্বাধকিারী নাসির হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
বরিশাল গণপূর্ত মেডিকেল কলেজ উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কামাল হোসেন হাওলাদার বলেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে মেয়াদান্তে বরাদ্দ চলে যায়। তখন ঠিকাদার মাত্র ৩৫ ভাগ কাজ করতে সমর্থ হয়। পরে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তিনি কিছু দিনের জন্য কাজ বন্ধ করেন। এখন আবার শুরু হয়েছে। অন্যদিকে গত এপ্রিলে একনেকের বৈঠকে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে একশ' কোটি টাকার বরাদ্দ ২৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১২৭ কোটি অনুমোদন করা হয়েছে। পুরোদমে কাজ চললে নতুন মেয়াদের মধ্যেই নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করেন এই প্রকৌশলী।
তবে প্রকল্পে আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি কিংবা জনবল কোনোটিই ধরা নেই বলে জানান তিনি। হাসপাতালটি চালু হলে একইসঙ্গে ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগের চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এর দ্বিতীয় তলা থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত ২শ' বেডে চিকিৎসা হবে ক্যান্সার রোগীদের, ৮ম তলা থেকে ১২তম তলা পর্যন্ত ১৫০ বেডে চিকিৎসা হবে কিডনি রোগীদের, আর ১৩তম তলা থেকে ১৭তম তলা পর্যন্ত চিকিৎসা হবে হৃদরোগ রোগীদের। অর্থাৎ বরিশাল বিভাগে এটি হবে চিকিৎসার সর্বাধুনিক হাসপাতাল।
গণপূর্ত বরিশাল সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, প্রথম ধাপের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বরাদ্দের টাকা ফেরত গেছে। তাই ঠিকাদারকেও কিছু বিল দেওয়া হয়নি। তবে নতুন বরাদ্দ অনুমোদন হওয়ায় ঠিকাদার আবারও কাজ শুরু করেছেন। আমরা চলিস্নশ দিনে দুটি করে ছাদ ঢালাই দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করছি নতুন মেয়াদের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
এদিকে ভবনের কাজ এক-তৃতীয়াংশ হলেও এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে দুইবার। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক ডা. মাসুদ আলম তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জানান, নির্মাণ কাজ প্রত্যাশার চেয়ে কম সম্পন্ন হওয়ার পেছনে মাটির লোড ক্যাপাসিটিও অনেকটা দায়ী। কেননা ক্যানসার হাসপাতালের জন্য যেরকম বোরিং ও দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে তা অনেক জায়গার মাটি লোডই নিতে পারেনি। তাই মাটির লোড ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। আবার প্রকল্পের প্রথমে ছিল শুধুমাত্র ক্যানসার হাসপাতাল। পরে এটি সংশোধন করে কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট সংযোজন করা হয়েছে। তাছাড়া ঠিকাদারদের কাজের ধীরগতির জন্য নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিও একটি কারণ। তবে এটি সম্পন্ন হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি মাইল ফলক হবে বলে মনে করেন তিনি।