দেশে গত কয়েক দিন হলো টানা তীব্র গরম এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ফলে শরীর জুড়াতে মানুষ ঠান্ডা পানি ও শরবতের প্রতি ঝুঁকছে। চাহিদা বাড়ায় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী এ ব্যবসায় ঝুঁকছেন। সারিয়াকান্দি রাস্তার ধারে ও কালিতলাসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পানি ও লেবুর শরবত বিক্রির ধুম পড়েছে। তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় মাছের বরফ দিয়ে এসব শরবত তৈরি করে বিক্রি করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন এসব পানি ও শরবত পান করাতে তৃষ্ণা মিটলেও বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এতে করে কলেরা, ডায়রিয়া ও টাইফয়েডের মতো জীবাণু রয়েছে।
গরম এলেই পৌর এলাকার ফুটপাতে জুস কিংবা ঠান্ডা পানীয় বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের সংখ্যা বেড়ে যায়। লেবু, ট্যাং, আখের রসসহ নানা ফলের শরবত বিক্রি করেন তারা। প্রচন্ড গরমে এসব পানীয় বিক্রিও হয় বেশ ভালো পরিমাণে। এ সুযোগে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে এসব পানি তৈরি করে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকার ব্যবসা করছেন মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
এদিকে তৃষ্ণায় পিপাসা মেটাতে পথচারী ও নিম্নবিত্তরা নিশ্চিন্তে এসব পানীয় পান করছে। শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সারিয়াকান্দি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা।
হাসপাতালের ও ক্লিনিকের সূত্রমতে, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে। এছাড়া, হাসপাতালে পেটেরপীড়া, ঠান্ডা-জ্বর নিয়ে আগত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সারিয়াকান্দি বাজারের ভেতর, মাংস হাটি, কালিতলা গ্রোহিন বাঁধের সামনে ৮-১০টি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ঠান্ডা পানীয়। ড্রাম ভর্তি রঙিন পানিতে (সিভিটা, ইসপি, প্যালিটা সফট ড্রিংক পাউডার মেশানো পানি) লেবু, বিট লবণ ও মাছ সংরক্ষণের বরফ মিশিয়ে তৈরি প্রতি গস্নাস রঙিন শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এছাড়া, আখের শরবত প্রতি গস্নাস ২০ টাকা, মালাই শরবত ১০ টাকা, লেবু-বরফ মেশানো শরবত ৫ টাকা করে বিক্রি করছেন।
তবে পর্যটনের জায়গাগুলোতে এসব দোকানিদের চাহিদা বেশি। এছাড়াও জনবহুল এলাকাসহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মৌসুমি পানীয় ব্যবসায়ীরা শরবত বিক্রি করেন। তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে ও খেলা শেষে শরবতের নামে পান করছে অস্বাস্থ্যকর এসব পানীয়। ছোট একটি বালতিতে রাখা পানিতে বারবার গস্নাস ধোয়ায় নোংরা হয়ে যাওয়া সেই পানিতে আবারও গস্নাস ধুয়ে বাচ্চাদের শরবত দেওয়া করা হচ্ছে।
কালিতলা শরবত ব্যবসায়ী বাবু বলেন, 'গরম বাড়লে লেবু পানি ভালো বিক্রি হয়। মাংস হাটির পেছনে যে বরফ কল আছে, ওখান থেকে আমরা বরফ নেই। এসব পাটা মাছ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়, প্রতিটা বরফ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দিয়ে কিনি। এই বরফ, বিট লবণ আর লেবু দিয়ে শরবত বানাই।' পানি সংগ্রহের স্থান হিসেবে পার্শ্ববর্তী একটি কল থেকে পানি সংগ্রহ করেন তিনি।
জানা যায়, প্রতিদিন কয়েকশ' মানুষ বাবুর দোকান থেকে শরবত খান। তার দোকানে গস্নাস মাত্র ১০টি। একজনের খাওয়া শেষ হলে ময়লা পানিতে ধোয়ার পর আবারও সেই গস্নাসে পরিবেশন করা হচ্ছে শরবত। একই চিত্র দেখা যায় প্রত্যেকটি দোকানে।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার ইনস্টিটিউটের কনসালটেন্ট ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, 'গরমের সময়ে প্রয়োজনীয় পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য জরুরি। কিন্তু রাস্তার ধারে ভ্যানে খোলা অবস্থায় যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কারণ যে পানি রাস্তার পাশে বিক্রি হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে পানির পাত্রটি ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। গস্নাসগুলো ঠিকমতো ধোয়া হচ্ছে না। ফলে জীবাণু থেকে যায়।'
তিনি আরও বলেন, একই গস্নাস বারবার ব্যবহারের ফলে একজনের জীবাণু আরেকজনের মধ্যেও যাচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে সহজেই সংক্রমিত হচ্ছে। রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর পানীয় পান করায় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়াও দূষিত পানির কারণে অন্যান্য রোগ বাড়ছে। বিশুদ্ধ ও ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।