শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

যমুনায় ভাঙন, অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে!

পাবনা প্রতিনিধি
  ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
পাবনার বেড়ায় অসময়ে যমুনার ভাঙনে নদীপাড়ের ফসলি জমি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিলীন হচ্ছে। আর চোখে চিন্তার ছাপ নিয়ে সেই দৃশ্য দেখছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা -যাযাদি

অপরিকল্পিত বালু দসু্যতার কারণে প্রতিবার অসময়ে ভাঙন দেখা দেয় যমুনা নদীতে। ইতোমধ্যে যমুনার ভাঙনে পাবনার বেড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থানসহ মসজিদ। ভাঙন প্রতিরোধে ক্ষতিগ্রস্তসহ স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রম্নত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত নদীর ভাঙন পাড়ে দাঁড়িয়ে দোয়া চাইছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চরনাগদাহ, হাটাইল আরালিয়া চরসাড়াসি গ্রাম ও নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম এই ভাঙনের মুখে। চরসাড়াসি ও চরনাগদাহ গ্রামের ভাঙন কবলিত অসহায় মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অসময়ে যমুনার ভাঙন দেখা দেওয়ায় গেল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে লেওলাইপাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধশত বিঘার মতো ফসলি জমি ও চরসাড়াসি গ্রামে ১৫ থেকে ২০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বসবাসের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন ভারেঙ্গার লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীতে। আর সে দৃশ্য দেখে বাসিন্দাদের চোখে চিন্তার ছাপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবোর কর্মকর্তারা শুধু খোঁজখবর নেন, কিন্তু কোনো কাজ শুরু করেননি। তাদের দাবি, এবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদু্যৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে গ্রামবাসীর দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। তাই ভাঙন রোধে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

চরনাগদাহ গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক বলেন, 'নদী ভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহ খানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি। আমার এ দুর্দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের গ্রামের একটি পাড়া নদীতে চলে গেছে। পাউবো দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন আরও ভয়াবহ হতে পারে।'

হাটাইল চরের কৃষক জয়নাল মোলস্না বলেন, 'প্রতি বছরই বর্ষাকালে আমাগেরে চরের মানুষ নদীভাঙনে বাড়িঘর জমি হারায়। এবারও অসময়ে ভাঙন শুরু হইছে। কয়দিন আগে আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল ক্ষেত নদী গিলে খাইছে। সব মিলিয়ে আমি প্রায় ১০ বার এ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি।' এক সপ্তাহ এই ভাঙন থাকলে এই বাড়িও হয়তো নদীতে ডুবে যাবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নদীতে যেন জিওব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করে।'

নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, 'গত দুই সপ্তাহ ধরে আমার ইউনিয়নের লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গেল এই কয়দিনেই প্রায় অর্ধশতাধিক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে মাটি ফেলে উদ্বোধন করা মুজিব বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ঘনবসতি দুই থেকে তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।'

বেড়া ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম বলেন, 'যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। খোঁজ নিয়ে এবং পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রম্নত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, 'যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে এমন খবর পেয়ে ইতোমধ্যেই কবলিত ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছি। ভাঙন প্রতিরোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে