শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

পাহাড়ি লিচু বাগানে হাতির তান্ডব

২০ লাখ টাকার ক্ষতি!
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০
পাহাড়ি লিচু বাগানে হাতির তান্ডব

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার চাইল্যাতলীর রাঙ্গাপানিছড়া এলাকায় বন্য হাতির তান্ডবে স্থানীয় ফলদ বাগান মালিকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরপর গত দুই রাত একপাল হাতি রাঙ্গাপানিছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পুরান বস্তি এলাকায় হানা দিয়ে ৭-৮টি বাগানের প্রায় ৫ শতাধিক ফলন্ত লিচু গাছ উপড়ে ও ভেঙে ফেলেছে। এতে চাষিদের ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বন্য হাতির অব্যাহত তান্ডবে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।

সূত্রে জানা যায়, অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধন ও বনাঞ্চলে জনবসতি গড়ে ওঠার কারণে পাহাড়ে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এতে খাবারের সন্ধানে বেপরোয়া হয়ে ওঠে বন্য হাতিগুলো। প্রতি বছর আম, কাঁঠালের মৌসুমে হাতির পাল লোকালয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা মানুষের ফলদ বাগান ও জমির পাকা ধানসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। চলতি বছরও এক পাল বন্যহাতি উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। হাতির পালটি পরপর দুই রাতে চাইল্যাতলী বাজার সংলগ্ন কয়েকটি এলাকার স্থানীয় চাষি মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. কাওসার, শেখ ফরিদ ও নাজির হোসেনের লিচু বাগানে তান্ডব চালায়। হাতির পালটি শতাধিক আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ও লিচু গাছ ভেঙে ও উপড়ে ফেলেছে। এ ছাড়া ভেঙে ফেলেছে বাগানের সীমানাপ্রাচীরও। একই সময় পাশের কয়েকটি বাগানেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে কাওছার ও জাহিদুল ইসলাম জানান, 'দীর্ঘদিনের পরিশ্রম শেষে লিচু বাজারজাত করার আগ মুহূর্তেই বন্যহাতি গত ২-৩ রাতেই আমাদের পুরো বাগান তছনছ করে ফেলেছে। এতে আমাদের প্রত্যেক চাষির কমপক্ষে ২-৩ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।'

এদিকে স্থানীয় অন্য চাষিরা জানান, লিচুর ভালো ফলন, বাজারদর বেশি ও দেশের সর্বত্র পাহাড়ি লিচুর যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও তারা কাপ্তাই হ্রদের পানি স্বল্পতার কারণে জেলা ও উপজেলা সদরে লিচু বাজারজাত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে তারা ক্ষতির শঙ্কায় আছেন। এতে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় চাষিরা অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিশাল রাজস্ব ও অর্থনীতিতে নামছে ধস।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যহাতি তাড়াতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণসহ টর্চলাইট, বাঁশি ও পোশাক দেওয়া হয়েছে। কোথাও বন্যহাতি আক্রমণ চালালে এ কমিটির লোকজন হাতিগুলো গহিন অরণ্যে তাড়াতে কাজ করে। তবে বর্তমানে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়ছে কমিটির সদস্যরা।

কাঁচালং রেঞ্জ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা সবসময়ই স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বন্যহাতির তান্ডবে-আক্রমণে কোনো হতাহত অথবা বাসাবাড়িসহ কৃষি ক্ষেতের বা বিভিন্ন ফলদ বাগানের ক্ষয়ক্ষতি হলে তাদের নিয়মানুযায়ী আবেদনের প্রেক্ষিতে সহায়তা প্রদান করি। এ পর্যন্ত ওই এলাকার ২২ জনকে সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।'

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ভাসান্যাদম এলাকায় বন্যহাতির তান্ডব আগে থেকেই কিছুটা বেশি। কাচালং রেঞ্জের দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় লিচু চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের সরকারিভাবে বন বিভাগের পক্ষে সহায়তার ব্যবস্থা করব।

উলেস্নখ্য, গত ১ বছরে উপজেলার বগাচতর ও ভাসান্যাদম এলাকায় বাগানের ফল, জমির ধান রক্ষা করতে গিয়ে বন্যহাতির কবলে পড়ে ৪ জন প্রাণ হারান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে