শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

ট্রেনের রুট পরিবর্তনে ভোগান্তির শিকার কুষ্টিয়ার লাখো মানুষ

সুন্দরবন-বেনাপোল পুনর্বহাল ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন রুট বদলের প্রতিবাদ
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা রেলওয়ে স্টেশন -যাযাদি

এক সময় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা রেলওয়ে জংশন ছিল। কালের আবর্তে তা আজ হারিয়ে গেছে। ভেড়ামারা, দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলার লাখ লাখ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ইতোপূর্বে ভেড়ামারা রেল স্টেশন থেকে সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন রুট বদল করা হয়েছে। জুন মাস থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন রুট বদল করার ঘোষণা দেওয়ায় শনিবার সকাল ১০টার সময় ভেড়ামারা রেল স্টেশনে ৩ উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের উদ্যোগে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে।

রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছর ১ নভেম্বর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ২ নভেম্বর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা টু ঢাকা চলাচল শুরু করে। এর ফলে ভেড়ামারা, দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলার শত শত ঢাকাগামী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু তাই না চরম বিপদগ্রস্ত অবস্থায় পড়েছে টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর ও এয়ারপোর্টে বিদেশগামী যাত্রীরা। এবার চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন জুন মাসে রুট বদলের কথা শোনা যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাসহ মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার লাখো লাখো মানুষ সুন্দরবন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো ঢাকাগামী বঙ্গবন্ধু্‌ সেতু হয়ে একমাত্র ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস হারাতে বসেছে। এতে ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হবে।

ভেড়ামারা সরকারি কলেজের ক্রীড়া বিভাগের প্রধান জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল বলেন, 'অবিভক্ত বাংলায় বিশেষ করে পূর্ব বাংলা অংশে কলকাতা টু জগতি প্রথম রেলওয়ে সার্ভিস চালু হয়। এরপর কলকাতা টু ভেড়ামারার দামুকদিয়া ঘাট। দামুকদিয়া থেকে রেল ফেরিতে সাঁড়াঘাট হয়ে উত্তরাঞ্চল, এভাবে রেল সম্প্রসারিত হয়। একসময় ভেড়ামারা রেলওয়ে জংশন ছিল। কালের আবর্তে তা হারিয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্টেন ভেড়ামারা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ঢাকা যাতায়াত শুরু করে। ফলে কুষ্টিয়ার মিরপুর, দৌলতপুর, ভেড়ামারা, মেহেরপুরের গাংনি, মেহেরপুর অঞ্চলের যাত্রীরা ভেড়ামারা রেলস্টেশন ব্যবহার করে সিরাজগঞ্জ, ক্যাপ্টেন মনসুর, যমুনা পূর্ব ও পশ্চিম, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কমলাপুর যাতায়াত করত। সদ্য সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি তুলে নিয়ে ট্রেনের রুট পরিবর্তন করায় এ অঞ্চলের যাত্রীরা উলিস্নখিত স্থানগুলোয় যাতায়াতের জন্য বিড়ম্বনায় পড়েছে।

ভেড়ামারা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, একটা এলাকা কতটুকু উন্নত তা নির্ভর করে সেই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু ভেড়ামারার ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনীতি-অর্থনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক ট্রেনগুলো রুট পরিবর্তন করে চলে যাচ্ছে। গুরুত্ব হারিয়ে বঞ্চিত হচ্ছে ভেড়ামারা, দৌলতপুর, মিরপুর ও মেহেরপুরের গাংনি অঞ্চলে বসবাসকারী একটা বিশাল জনগোষ্ঠী। তাই ভেড়ামারা হয়ে ঢাকাগামী সুন্দরবন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনর্বহাল ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ না করার জন্য শনিবার সকাল ১০টায় রেল স্টেশনে জনস্বার্থমূলক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে এবং দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পোল্ট্রি উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, 'আমি একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা। পোল্ট্রি খামার, পোল্ট্রি হ্যাচারি, পোল্টির ওষুধ ও খাদ্যসহ ব্যবসার প্রশিক্ষণে যাই। চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকাতে মাসে কয়েক বার যেতে হয়। ভেড়ামারা থেকে ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে সারাদিন ব্যবসার সব কাজ সেরে রাত্রে ট্রেন ধরে ঢাকা যায়। বিভিন্ন কাজ সেরে আবার রাত্রে ট্রেন ধরে ভেড়ামারায় আসি। এতে সময় অর্থ দুইটাই বাচে। বর্তমানে যদি ঢাকা থেকে ভেড়ামারা ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকে এতে আমাদের সময়, অর্থ দুইটাই অপচয় হবে এবং ক্ষতির সম্মুখীন হব।'

ভেড়ামারা স্টেশন মাস্টার জয়নাল আবেদীন বলেন, ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন সম্পর্কে ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তারা এখনো আমাদের কোনো তথ্য প্রদান করে নাই। তবে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে