শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
কৃষকদের লিখিত অভিযোগ ও বিক্ষোভ

রাজৈরে ১৮শ' একর আবাদি জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ

রাজৈরে (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
মাদারীপুরের রাজৈরে ধানের জমি দখল করার প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি -যাযাদি

বর্তমানে বাংলাদেশে আবাদি জমির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই ক্ষেতের জমি অনাবাদি না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সরকার। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের সেই পরামর্শ। ঠিক এমনই একটি দালাল চক্রের নজর পড়েছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার লক্ষ্ণীপুর গ্রামের বৃহত্তর ধানের ক্ষেতের দিকে। ব্যক্তি মালিকানা ১৮০০ একর (প্রায় ৭২৯ হেক্টর) ধানের আবাদি জমি জোরপূর্বক ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। বাধা দেওয়ায় কৃষকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক দু'টি মামলাসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে দালালচক্রের সদস্যরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে লক্ষ্ণীপুরের ওই জমির মধ্যে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। এদিকে ফসলি জমিতে মাছের ঘের করার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ।

কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার ৬৬নং সিরাজকাঠি বড়হাট মৌজা ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ১ ও ২নং বৈকণ্ঠপুর মৌজার ১৮০০ একর জমি নিয়ে এই অঞ্চলের বৃহত্তর ধান ক্ষেত। এর এক-তৃতীয়াংশ জমি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ও লক্ষ্ণীপুর গ্রামের সীমানার মধ্যে পড়েছে। দুই উপজেলার সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ এই জমির ওপর নির্ভরশীল। এই ক্ষেতে প্রতি এক একর জমিতে ৯০ থেকে ১০০ মণ ধানের ফলন হয়। পাটেরও হয় বাম্পার ফলন।কিন্তু পুরো এই ১৮০০ একর আবাদি জমিটি নষ্ট করে মাছের ঘেরের প্রজেক্ট তৈরি করার কথা বলে জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি।

জমিগুলো ব্যক্তি মালিকানা হওয়ায় তার এই কাজ সম্পন্ন করতে তার সঙ্গে ৬৫ লাখ টাকার চুক্তি করেছে স্থানীয় দালালচক্র। বর্তমানে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে জমিটি দখল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। এর আগে কৃষকদের বিরুদ্ধে মাদারীপুর আদালতে সন্ত্রাসী হামলা ও চাঁদাবাজির মতো হয়রানিমূলক দু'টি মামলাও করেছে দালালচক্রের সদস্যরা।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান বরাবর ৪৪৬ জনের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়াসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। পরে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। তবে আবাদি জমি নষ্ট করে মাছ চাষ করা হলে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ফসল থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাছের ঘের ব্যবসায়ী অসিম পান্ডে বলেন, 'আমরা বছরে তিন মাস মাছ চাষ করব। বর্ষাকাল শেষে পানি নামিয়ে তাদের জমি পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।' স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে ৬৫ লাখ টাকার চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'এত বড় মাপের চুক্তি তাদের সঙ্গে হয়নি। কিন্তু তারা তো আর টাকা ছাড়া আমার জন্য কাজ করবে না। তাই কিছু টাকা তাদের দেব এটা সত্য।'

মাদারীপুর কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ফসলি জমিতে মাছের ঘের করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে সরজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নুসরাত আজমেরী হক বলেন, 'আমার এ বিষয়টি জানা নেই। তবে কৃষকরা অভিযোগ করলে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে