শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
গাংনীতে গরু পরিচর্যায় বাড়তি মনোযোগী খামারি ও গেরস্তরা

পটুয়াখালীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত মরুর প্রাণী 'দুম্বা'

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুরের গাংনীতে খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত গরু -যাযাদি

পটুয়াখালীতে দুম্বা পালন করে সফল হয়েছেন খামারি শানু মৃধা। বর্তমানে তার খামারে নিয়মিত দুম্বা উৎপাদন হচ্ছে। রোগবালাই কম হওয়ায় এবং খাবার খরচ সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে অনেকেই দুম্বা পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট পরিসরে এ ধরনের খামার করার পরমর্শ প্রাণিসম্পদ বিভাগের। আর এবার কোরবানীতে এই খামারে দু'টি দুম্বা বিক্রির উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

মরু অঞ্চলের প্রাণী হলেও বেশকয়েক বছর আগ থেকেই দেশের অনেক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে দুম্বা পালন শুরু হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় দুই বছর আগে দু'টি দুম্বা দিয়ে খামার শুরু করেন পটুয়াখালী শহরের কলাতলা এলাকার বাসিন্দা শানু মৃধা। এর আগে তিনি ছাগল এবং ভেড়া পালন করলেও বাড়ির ছাদে বড় আকারের দু'টি খোঁয়াড় তৈরি করে দুম্বা লালন-পালন করছেন। সেই দু'টি দুম্বা থেকে দুই বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে তার খামারে এখন ৯টি দুম্বা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি দুম্বা বিক্রিও করেছেন।

শানু মৃধা জানান, দুম্বা লালনপালন করা খুবই সহজ। তিনি যশোর জেলা থেকে দু'টি দুম্বা এনে লালনপালন শুরু করেন। প্রথম পর্যায়ে একটি বাচ্চা দিলেও এখন দু'টি করে বাচ্চা পাচ্ছেন। পাশপাশি তিনি গাড়লের সঙ্গে দুম্বার ক্রস করে উন্নত জাতের ভেড়া তৈরি করছেন। ধীরে ধীরে তার এই খামার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান।

ভিন্নধর্মী এই পশুরখামার দেখতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষ ছুটে আসছেন। এই কোরবানীতে বিক্রির উপযোগী করে তার খামারে দু'টি দুম্বা তৈরি করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য চাওয়া হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার এই খামার দেখে অনেকেই দুম্বা পালনে আগ্রহী হচ্ছেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল হক সরদার জানান, দুম্বা ও ভেড়া কাছাকাছি প্রাণী। দুম্বা মরুর প্রাণী হলেও এটি একটি সহনশীল প্রাণী। ভেড়ার মতোই দ্রম্নত বংশ বৃদ্ধি করে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে দুম্বা পালন লাভজনক। কোরবানীর সময় এর বেশ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকে।

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের গরুর খামারি ও গেরস্তরা। কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটা তাজাকরণ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করছেন তারা। অন্যদিকে গরুর বায়না দিতে গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন বেপারীরা। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গেরস্তদের কাছে পছন্দের গরুটির বায়না দিচ্ছেন। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় তুলবেন গরু। ততদিন পর্যন্ত গেরস্তের বাড়িতে রাখার সুযোগ পাবেন বেপারীরা। তবে গেরস্তের দাবি বেপারীরা দাম হাঁকছেন কম। আর বেপারীরা বলছেন, পশু অনুযায়ী গেরস্তরা দাম চাচ্ছেন বেশি। তবে প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আমদানির আশঙ্কায় চিন্তিত খামারিরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু পালনে বাড়তি মনোযোগী হয়েছেন খামারি ও গেরস্তরা। সর্বক্ষণ পশুকে পর্যবেক্ষণে রাখছেন। করছেন বাড়তি যত্ন। গোসল দেওয়া, কাঁচা ঘাস সংগ্রহ ও পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা যেন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা। তবে গোখাদ্যের পাশাপাশি চিকিৎসা খরচ, ওষুধ ও পালন ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিচ্ছেন বেপারীরা। তারা সুযোগ বুঝে বায়না করছেন। ঈদের কয়েকদিন আগে ঢাকার কোরবানির হাটে তুলবেন পশুগুলো।

গাংনীর কুঞ্জনগর গ্রামের পশুপালনকারী রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি দুই বছর যাবৎ সাতটি এঁড়ে গরু পালছেন। নেপালি জাতের এ গরুগুলো প্রতিটি ৭৫ হাজার টাকা করে কিনেছেন। দু'বছর অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে তাদের পেছনে। এখন বাড়িতে এসে বেপারীরা প্রতিটি গরুর দাম বলছেন দুই লাখ টাকা। এতে তেমন লাভ হচ্ছে না। তবে আরও একটু দাম বেশি হলে বিক্রি করবেন। না হলে ঢাকার হাটে তুলবেন এই গেরস্ত।

কামারখালি গ্রামের ময়নাল হক জানান, তাদের চার ভাইয়ের ২১টি গরু আছে। গেল কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে নীলফামারী থেকে বাছুর গরু কিনে লালন-পালন করছেন তারা। একেকটি বাছুর ৩৫ হাজার টাকা করে কিনেছেন। এখন বেপারীরা একেকটি গরুর দাম বলছে লাখ টাকার বেশি। কামারখালী গ্রামের আম্বিয়া খাতুন জানান, তিনি গত কোরবানির পর ৬০ হাজার টাকায় একটি বাছুর গরু কেনেন। লালন-পালনে খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে তার গরুটির দাম উঠেছে দেড় লাখ টাকা। তিনি সরকারিভাবে তাদের মতো গরু পালনকারীদের জন্য প্রণোদনা দাবি করেন।

কুঞ্জনগরের গরুর বেপারী শহীদুল জানান, গেল ঈদের সময় কোটি টাকার গরু বিক্রি করেছেন। এবারও তিনি দেড় কোটি টাকার গরু ঢাকাতে নিয়ে যাবেন। প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করা গরু কিনছেন তিনি।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ৩২ হাজার ৭০৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দরিদ্র কৃষকের বাড়িতেও দুয়েকটি করে গরু। প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবীদের সজাগ রাখা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে