শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে কালিয়াকৈরে ৮ ও নিয়ামতপুরে ৬ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে কালিয়াকৈরে ৮ ও নিয়ামতপুরে ৬ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শিষ্যের কাছে ২১ হাজার ৬৫৭ ভোটের ব্যবধানে গুরুর বিশাল পরাজয় হয়েছে। নিস্তব্ধ আওয়ামী লীগের ভোট ব্যবসায়ীসহ বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা। অপরদিকে নির্বাচন বিধি অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ভোট না পাওয়ায় ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে আটজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। শিষ্যের কাছে গুরুর হারের কারণ ও আট প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া নিয়ে নানা হিসাব কষছেন উপজেলাবাসী।

এলাকাবাসী, প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মী-সমর্থক সূত্রে জানা গেছে, ২১ মে মঙ্গলবার কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৯টি ইউনিয়ন ও কালিয়াকৈর পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৪ জন। এ নির্বাচনে তিনজন চেয়ারম্যান, সাতজন ভাইস চেয়ারম্যান ও পাঁচজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী অংশগ্রহণ করে।

এসব পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ চেয়ারম্যানের চেয়ারটি। এই চেয়ারম্যান পদের জন্য কাগজে-কলমে একই দলের তিনজন প্রার্থী হন। তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী (কাপ পিরিচ) মুরাদ কবীর শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাই এ পদে লড়াই করেছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদার (আনারস) এবং তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর, গাজীপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সেলিম আজাদ (মোটর সাইকেল)।

নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা এই দুই নেতার লড়াইকে গুরু-শিষ্যের লড়াই হিসেবে দেখেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার শিষ্য সেলিম আজাদ মোটর সাইকেল প্রতীকে ৮৩ হাজার ৯৬১ ভোট পেয়ে বিজয় অর্জন করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তার গুরু কামাল উদ্দিন সিকদার আনারস প্রতীকে ৬২ হাজার ৩০৪ ভোট পান।

এছাড়াও তালা প্রতীকে ৪৯ হাজার ৪৬২ ভোট পেয়ে মনোয়ার হোসেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও হাঁস প্রতীকে ৬৮ হাজার ৪৫৫ ভোট পেয়ে শরিফা আক্তার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় অর্জন করেন।

অপরদিকে এ নির্বাচনে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৬ ভোট কাস্টিং হয়। এর মধ্যে হেভিওয়েট চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবীর (কাপ পিরিচ) ৫০৬, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আ ফ আ হা জেহাদী মোজাদ্দেদী (টাইপ রাইটার) ২ হাজার ৭৫০, মতিউর রহমান মাইক (মাইক) ৩ হাজার ৮৭০, তোফাজ্জল হোসেন মৃধা (উড়োজাহাজ) ৪ হাজার ৩০৪, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছ খান (বই) ১৪ হাজার ৯৭৭, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আসমা খাতুন (পদ্ম ফুল) ১৭ হাজার ১১৯, নাজমা সরকার (ক্যামেরা) ১২ হাজার ৩৯০ ও সুমি আক্তার (কলস) ২০ হাজার ৮৮৭ ভোট পান। মোট ভোট কাস্টিংয়ের ১৫ শতাংশের কম ভোট পাওয়া তাদের আটজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ বলেন, বিপুল ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করায় প্রাণের কালিয়াকৈরবাসীকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। জনগণের সেবা করার জন্য তাদের একজন প্রতিনিধি আমাকে বেছে নিয়েছেন। সব নেতাকর্মী ও জনগণের মতামত নিয়ে সুন্দর কালিয়াকৈর গড়ে তোলা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী নির্বাচন কর্মকতা কাউছার আহম্মেদ বলেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকসহ জনগণ সার্বিক সহযোগিতা করায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে গত মঙ্গলবার নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ তিন পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ১৫ জন। এর মধ্যে ৬ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুকূলে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য জমা দিতে হয় ৭৫ হাজার টাকা। নির্বাচনে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, তাহলে নির্বাচন কমিশনে তার জমা দেওয়া টাকা (জামানত) বাজেয়াপ্ত হবে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজনসহ মোট ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে দু'জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে দু'জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ১১ হাজার ৭৫৬ জন। এখানে চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১২১ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১৫ হাজার ৭৬৮, যা পাননি দুই প্রার্থী। তারা হলেন- আবেদ হোসেন মিলন ও সোহরাব হোসেন। আবেদ হোসেন মিলন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। সোহরাব হোসেনের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। এখানে ৩৯ হাজার ৬৫৪ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ২৩ হাজার ১৩৬ ভোট।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে তিন প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৭ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১৫ হাজার ৭৫২ ভোট। এই পরিমাণ ভোট পাননি তিন প্রার্থী। তারা হলেন তালা প্রতীকের রেজাউল করিম, মাইক প্রতীকের তাওফিক হোসেন চৌধুরী ও নলকূপ প্রতীকের আফজাল হোসেন। এখানে রায়হান কবির চশমা প্রতীকে নির্বাচন করে ৪১ হাজার ২৪১ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বাল্ব প্রতীকের তুশিত কুমার সরকার পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬৩৯ ভোট।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন এক প্রার্থী। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৭৪। এর ১৫ শতাংশ হচ্ছে ১৫ হাজার ৭৪৬ ভোট। এই পরিমাণ ভোট পাননি একজন প্রার্থী। তিনি হলেন পদ্মফুল প্রতীকের স্বপ্না। এখানে হাঁস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে নাজমিন আরা খাতুন ৪৩ হাজার ৪৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কলস প্রতীকের নাদিরা বেগম পেয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ ভোট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে