কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনিরাম গ্রামের এক অভাবী পরিবারে জন্ম নেওয়া অদম্য মেধাবী মিনারজিম দিনমজুরি ও প্রাইভেট পড়ার টাকায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ গোল্ডেন পস্নাস অর্জন করেছে।
অদম্য মেধাবী মিনারজিম জানায়, 'আমি একটু গাইড পেলে লেখাপড়ায় সেরা হবো। আমাকে লেখাপড়ায় কেউ আটকাতে পারবে না।' আমি সেরা মেধাবীদের তালিকায় থেকে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারব।'
জানা গেছে, অদম্য মেধাবী মিনারজিম ওই গ্রামের প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান ও মা হালিমা বেগমের একমাত্র পুত্র। পিতামাতার আশা ছিল মিনারজিমকে ইসলামী লাইনে লেখাপড়া করাবেন।
পিতামাতার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মিনারজিম ছোট থেকে কোরআন শিক্ষা শুরু করে। পাশাপাশি জেনারেল লাইনে লেখাপড়া চালায়। তার অদম্য ইচ্ছায় ২০২১ সালে ফুলবাড়ী ফায়ার সার্ভিস তালিমুল কোরআন মডেল বালক ও বালিকা মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হয়।
এরপর বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে সেরা ফলাফল করার জন্য মনোনিবেশ শুরু করে। এখানে ফাস্ট বয় ছিল। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে প্রাইভেট পড়ানোসহ দিনমজুরির কাজ করতে হয় তাকে। অবশেষে নিজের কষ্টের উপার্জিত টাকা, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় এবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ গোল্ডেন পস্নাস অর্জন করেছে। তারপ্রাপ্ত নম্বর ১১৫৩।
মিনারজিমের পিতা মনিরুজ্জামান জানান, 'আমার ছেলে মিনারজিমের জিপিএ গোল্ডেন অর্জন আমাদের আনন্দ দিয়েছে। আমি ভাবতে পারিনি সে এত ভালো রেজাল্ট করবে। আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ, ছেলের জন্য কিছু করার ক্ষমতা নেই। তাই ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।'
মা হালিমা বেগম জানান, 'আমরা ছেলে মিনারজিম কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে কোরআনে হাফেজ হয়েছে। আমি তাকে ইসলামী লাইনে বেশিদূর লেখাপড়া করাতে পারিনি। সে শুধু হাফেজ হয়েছে। এরপর ছেলেটা নিজের দিনমজুরির টাকা ও প্রাইভেট পড়ার টাকায় এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। তার স্বপ্ন সে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে চাকরি নিয়ে দেশ-জাতির সেবা করবে। কিন্তু আমরা অসহায় গরিব তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারব না। এতে তার স্বপ্ন ভাঙতে পারে। এজন্য আমি ছেলের জন্য সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।'
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী ইউএনও রেহেনুমা তারান্নুম জানান, অদম্য মেধাবী মিনারজিমের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে তাকে সহযোগিতা করা হবে।