কালীগঞ্জে থামছে না কৃষিজমির মাটিকাটা

ভুল তথ্যে প্রশাসন বিভ্রান্ত

প্রকাশ | ২২ মে ২০২৪, ০০:০০

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালীগঞ্জে পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় কয়েকটি চক্র কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক মাস ধরে চলছে কৃষি জমির এ মাটি কর্তন। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন একাধিক অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তিকে জেল-জরিমানা করলেও থামছে না এই মাটিকাটা। তবে স্থানীয় অনেক নেতা নিজেদের অন্তঃকোন্দলে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে প্রশাসনকে ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে ইউএনও এস এম ইমাম রাজী টুলুর সঙ্গে আলোচনায় এবং গত সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভায় বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বিভিন্ন গোপন তথ্যেও ওপর ভিত্তি করে প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চালালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে ঘটনার কোনো মিল নেই। এতে করে স্থানীয় জনগণকে সেবা প্রদান করা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি যথাযথ তথ্যের সঙ্গে ঘটনার মিল থাকলেই অপরাধী জেল-জরিমানার শিকার হচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্নস্থানে কৃষি জমি উঁচু-নিচু হওয়ায় অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে সেগুলো সমান করার ব্যবস্থা করেন। আবার অনেক কৃষক তাদের বোরো জমিতে ধানের ফলন না হওয়ায় চারপাশে পাড় বেঁধে মাছ চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন। অনেকে নিজেদের নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কৃষি জমির মাটি কেটে সেখানে ফেলছেন, কেউবা বর্ষা ও বন্যার পানি থেকে রক্ষার জন্য নিজেদের বাড়ি উঁচু করছেন। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিভক্তির কারণে এবং তাদের নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে প্রশাসনকে ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত করছেন। সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ২৪ এপ্রিল বিকালে উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। অভিযানে পাঁচটি ভেকু ও পাঁচটি লরির ব্যাটারি জব্দ করা হয়। এছাড়াও কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ করা হয়। চলতি মাসের ৪ মে উপজেলার জামালপুর, কাপাইস ও বড়হরা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় এবং বালু মহাল মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫ (১) ধারা লংঘনের দায়ে পাঁচটি মামলায় পাঁচজনকে ১৫ দিনের করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। গত ১৩ মে উপজেলা বক্তারপুর ইউনিয়নের ফুলদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই আইনে একজনকে ৫০ হাজার টাকা ও মাটিকাটার এই গণউপদ্রব বন্ধে একজনকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। সবগুলো অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও কালীগঞ্জ ইউএনও এস এম ইমাম রাজী টুলু। ইউএনও এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, 'আমি মাস খানেক হয় এ উপজেলায় যোগদান করেছি। কিন্তু যখনই কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়েছি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তখনই অভিযান পরিচালনা করেছি এবং জেল-জরিমানা করেছি। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো স্থানীয় কয়েকটি চক্র নিজের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রায়ঃশই প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। এতে করে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি আমি গেল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভায় আলোচনা করেছি। প্রশাসনকে সঠিক তথ্যের বদলে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করলে এখন থেকে ভুল তথ্যদাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'