শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

দুই পাশে সড়ক থাকলেও মই বেয়ে উঠতে হয় সেতুতে

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ২২ মে ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইলে লৌহজং নদীর কচুয়াডাঙ্গা-চরপাথলী নামক স্থানে সংযোগ সড়ক না থাকায় এভাবেই বাঁশ ও কাঠের মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে মানুষ -যাযাদি

টাঙ্গাইল পৌরসভার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীর কচুয়াডাঙ্গা-চরপাথলী নামক স্থানে তিন বছর আগে পৌরসভার অর্থায়নে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। দুই পাশে পাকা সড়ক থাকলেও সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচের মাটি ফেলা হয়নি। ফলে স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ বাঁশ ও কাঠের মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছে।

জানা যায়, সেতুটি নির্মাণ করতে চার কোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছে। সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত সাইনবোর্ড টাঙানো বাধ্যতামূলক হলেও নির্মাণস্থলে কোনো সাইনবোর্ড নেই। টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও পৌর প্রকৌশলী বিভাগসহ কেউ এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে উঠতে না পারায় পণ্য পরিবহণে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেতুতে উঠতে বাঁশ ও কাঠের মই ব্যবহার করায় মাঝে মধ্যেই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়রা জানায়, মহান স্বাধীনতার পর থেকে টাঙ্গাইল শহরের বুক চিরে বয়ে চলা লৌহজং নদীর কচুয়াডাঙ্গা-চরপাথলী এলাকায় সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়। জনগুরুত্ব বিবেচনায় টাঙ্গাইল পৌরসভা ওইস্থানে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে সেতু নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সনি এন্টারপ্রাইজ। টাঙ্গাইল পৌরসভার অর্থায়নে সেতুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণও করে। প্রায় তিন বছর আগে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু সেতুর দুই পাশের সড়কের সঙ্গে সেতুর সংযোগস্থলের অ্যাপ্রোচে মাটি নেই। ফলে সেতুর দুই পাশে চলাচলের উপযোগী রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। অলস-অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা সেতুর ওপর বর্তমানে গোবর শুকানো হচ্ছে। প্রায় তিন বছর আগে সেতুটি নির্মিত হলেও সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করা হয়নি। ফলে স্থানীয় পথচারীদের মই দিয়ে সেতুর উপরে উঠতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, দুই পাশে সড়ক থাকলেও সেতুটি অলস-অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সেতু পাড় হচ্ছেন। সেতুর দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে তীব্র দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাসকারীদের সমস্যা হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, সেতু চালু না হওয়ায় চলাচলে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী আনা-নেওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই মই দিয়ে সেতুতে উঠতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝে-মধ্যে বাঁশ ভেঙে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে। দ্রম্নত সেতুটি পুরোপুরি চালু করে যাতায়াতের সুব্যবস্থার দাবি করছে এলাকাবাসী।

ওই সেতু দিয়ে চলাচলকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সেতুর উপরে মই দিয়ে উঠতে তাদের খুব কষ্ট হয়। সেতুর মই বেয়ে চলাচলে বয়স্ক মানুষ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এরমধ্যে আবার মইয়ের এক পাশ ভাঙা।

স্থানীয় এক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান, সেতু নির্মাণ করে দু'পাশের অ্যাপ্রোচে মাটি ভরাট না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে গেছে। তিনি শুনেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার। এখন তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। মই বেয়ে সেতুতে উঠতে অনেকেই পায়ে লোহার পেরেক ঢুকে আহত হচ্ছেন। পৌরসভার কাছে আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। রাতে চলাচলকারী লোকজন ব্যাপক ভোগান্তির পাশাপাশি মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, সেতুটি দীর্ঘদিন আগে নির্মাণ করা হলেও এলাকাবাসীসহ এতদাঞ্চলের মানুষের কোনো কাজে আসছে না। ফলে রোগী আনা-নেওয়ার পাশাপাশি এলাকার কেউ মারা গেলে মরদেহ নেওয়ার সময় সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। কি কারণে সেতু এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে তা তারা জানেন না।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীম জানান, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ওইস্থানে সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করলেও সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচে মাটি ভরাট না করে চলে গেছে। ঠিকাদারে সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসার চেষ্টা করলেও কোনো কাজ হয়নি।

টাঙ্গাইল পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত করার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটির পক্ষে সায় পাওয়া গেলে আবার টেন্ডার করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে