মহাদেবপুরে ঐতিহ্যবাহী 'হুড় মেলা'
প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
বরেন্দ্র অঞ্চল (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের চেরাগপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হুড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হুড় মানে কোনো রমণীকে বোঝানো হয় না। গ্রামের একটি বিশেষ বট গাছের নিচে দিনব্যাপী হুড় হুড় (তাড়াহুড়ো) করে এ মেলা শুরু ও শেষ হয় বলে একে হুড় মেলা বলে। মেলায় প্রায় ২ শতাধিক বিভিন্ন দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছে। দিনব্যাপী মেলায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনার আশা ব্যবসায়ীদের।
এ মাজারে মনের বিশ্বাসে মানত করেন নানা ধর্মের মানুষ। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক মনোবাসনা পূরণই যেন সবার প্রত্যাশা। গ্রামীণ এ মেলার মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
চেরাগপুর গ্রামের পুকুরপাড়ে একটি বিশেষ বট গাছের নিচে মাটির একটি ঘরের মধ্যে মন্ডপ ও মাজার। আর এ মাজারে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ মানত করে থাকেন। প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় রোববার এ বটগাছের নিচে মেলা হয়ে থাকে। তবে এ বছর একমাস পর জৈষ্ঠ্য মাসের রোববার মেলা হয়। কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় ধান কাটা মাড়াইয়ের পর বটগাছের আশপাশেসহ ফাঁকা মাঠে মেলা হয়। এটি ঐতিহ্যবাহী হুড় মাজার মেলা নামে পরিচিত।
গ্রামীণ এ মেলায় বিভিন্ন পদের মিষ্টান্ন ও খাবারের দোকান, খেলনা সামগ্রী, কসমেটিক, মৌসুমি ফল এবং কৃষিযন্ত্রপাতিসহ আসবাবপত্রে দোকান পসরা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এমনকি রুই, কাতলা ও পাঙ্গাস মাছ এবং গরু ও মহিষের মাংসও বিক্রি হয়। দিনব্যাপী এ মেলা হলেও কসমেটিক ও কাঠের আসবাবপত্রের দোকান থাকে আরও কয়েকদিন।
মানত করে যাদের মনোবাসনা পূরণ হয় তারা এ মাজারে এসে রান্না করে উপস্থিত সবার মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আশপাশের অন্তত ১৮-২০ গ্রামের মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণ এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মাজারের খাদেম শুকচান বলেন- বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মানত করে থাকে। তাদের আশা পূরণ হলে পরে এ মাজারে এসে রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়।
মিষ্টান্নের দোকানি উজ্জ্বল কুমার বলেন, দিনব্যাপী মেলা হলেও একদিন আগে এসে বিকাল থেকে দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা শুরু করেছি। দিনব্যাপী মেলায় লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন মিষ্টান্ন বিক্রি হয়েছে।
মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন বলেন, প্রাচীনতম এ হুড় মেলায় ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমন ঘটে। তবে কবে থেকে এ মেলা হয়ে আসছে তা জানেন না স্থানীয়রা। তবে দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। মেলায় প্রায় ২ শতাধিক বিভিন্ন দোকান অংশ নিয়েছে। দিনব্যাপী মেলায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনার আশা।