চাষিদের শ্রম ও ঘামের দাম গিলে খেতে তৎপর সংঘবদ্ধ চক্র
প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের তালিকায় অস্তিত্বহীন মোবাইল নম্বরযুক্ত কৃষকের তালিকা প্রকাশ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় আলোচনা শুরু হয়েছে। গত শনিবার বিকালে উপজেলা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটি অনলাইনে লটারির মাধ্যমে ৬১৩ কৃষক-কৃষানীর কাছ থেকে ৩ মেট্রিক টন করে বোরো ধান ক্রয় করবে বলে একটি তালিকা প্রকাশ করে।
তালিকা থেকে জানা যায়, একাধিক চক্র কার্ডধারী কৃষকদের কাছে নামেমাত্র টাকায় কার্ড সংগ্রহ ও অস্থিত্বহীন মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বরাদ্দ তাদের নামে নিয়ে নেয়। যে কারণে প্রকৃত কৃষক-কৃষানীরা বঞ্চিত হয়েছে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে যেসব আবেদন এসেছে তিনি শুধু সেগুলো গ্রহণ করেছেন।
জানা যায়, কিছুদিন আগে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে বোরো ধান বিক্রির জন্য কৃষকের অ্যাপ নামক সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কৃষক-কৃষানী অনলাইনে আবেদন করেন। আবেদনের প্রথম ধাপে মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বর, ধানের ধরন দিয়ে প্রথম ধাপ নিবন্ধন করতে হয়। দ্বিতীয় ধাপে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন-পৌরসভা, জন্ম তারিখ, কৃষি কার্ডের পরিচিতি নম্বর ও জমির পরিমাণ দিয়ে আবেদন করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক কার্ডধারী কৃষক এক শতক ভূমিতে বোরো আবাদ করেই হাজারও শতক জমি আবাদের পরিমাণ উলেস্নখ করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, গত শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন আজমিরীগঞ্জের ফেসবুক আইডি থেকে লটারি থেকে নির্বাচিত কৃষকের তালিকা প্রকাশ করে। এরপর থেকে সাধারণ কৃষকদের মধ্যে লটারির অনিয়ম নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।
কৃষক সমর আলী বলেন, তিনি দুই একর জমিতে রোপা আমন ও বোরো ধান আবাদ করেছেন। কিছু ধান বিক্রি করেছেন ৭৫০ টাকা মণ দরে। আর কিছু ধান শুকিয়ে রেখেছেন সরকারিভাবে বিক্রির জন্য। তিনি অনলাইনে আবেদনও করেছেন। কিন্তু তার নাম তালিকায় নেই। শুধু সমর আলী নন, আরও অনেকের নাম নেই বলে কৃষকরা অভিযোগ তুলেছেন।
লটারিতে নির্বাচিত তালিকায় দেখা যায়, নির্বাচিত তালিকাভুক্ত কৃষক-কৃষানীর নামের পাশে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল নম্বর রয়েছে। তার মধ্য থেকে কয়েকটি গ্রামীণ ফোন নম্বরে কল দিলে দিনাজপুর ও ঝালকাঠির বলে জানান অপর প্রান্তের ব্যক্তি। এ ছাড়া টেলিটক কোম্পানির প্রায় দুই শতাধিকের ওপরের নাম্বার আছে ওই তালিকায়। বিভিন্ন নম্বরে কল দিয়ে জানা যায়, উলিস্নখিত নম্বরগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। সাধারণ কৃষকরা বলছেন, সম্মিলিত চক্রের কারণে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত। তাই প্রকাশিত তালিকা বাতিল করে প্রকৃত কৃষকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হোক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সামছুল হুদা বলেন, মোবাইল নম্বর যে কারও দিতে পারে। কিন্তু আমরা ধান সংগ্রহ করব তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া কৃষকের উপস্থিতিতে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষিকার্ড দেখে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, অনলাইনে আবেদন এসেছে, আমরা গ্রহণ করেছি। মোবাইল নম্বর আত্মীয়স্বজনদের দিতে পারে। দেখতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কিনা।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি জুয়েল ভৌমিক বলেন, আবেদন যে কেউ করতে পারবে। লটারিতে আসার আগ পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তর ও কৃষি অধিদপ্তরে যাচাই-বাছাই করে সঠিক আছে মর্মে আমাকে জানানোর পর আমার আইডি থেকে লটারি করেছি। এর মধ্যে যদি কেউ ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করে থাকেন বা যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়ে যান, তিনিও ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে যখন ধান বিক্রির জন্য গুদামে যাবেন, তখন জাতীয় পরিচয়পত্র, কৃষি উপকরণ কার্ড ও আবেদনকৃত মোবাইল নাম্বার নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেগুল্যে নিয়ে না গেলে তাকে বাতিল করে যে আবেদনগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে আবার লটারি করা হবে।