নরসিংদীতে সবজির ক্ষতি কৃষক পুষিয়েছে ধানে

প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০

আমজাদ হোসেন, নরসিংদী
নরসিংদীতে আধুনিক কৃষিযন্ত্র হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষক -যাযাদি
ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ক্ষেতের ফসল অনায়াসে ঘরে তুলতে পেরে ধন্য নরসিংদীর কৃষক। চলতি বোরো মৌসুমে প্রখর খরতাপে সারাদেশ যখন উত্তপ্ত নরসিংদীর কৃষকরা তখন ক্ষেতের পাকা ধান ঘরে ওঠানোর কাজে পুরোদমে ব্যস্ত। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সেই তুলনায় কৃষি সেক্টরে সবজি চাষে খুব একটা লাভবান হতে পারেননি নরসিংদীর কৃষক। বিশেষ করে গেল রমজান মাস থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও সবজির দাম নিম্নমুখী। শহরের বাজারগুলোয় সবজির দাম একটু বেশি মনে হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে কিন্তু বিক্রেতা হিসেবে কৃষকের চিত্রটা ভিন্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সবজি বিক্রিতে তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। এমনকি বাজারে সবজি নিয়ে সস্তায় বিক্রি করার পর পরিবহণ খরচ মেটাতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের। তবে সবজিতে লোকসান গুনলেও এ বছর ধানে মোটামুটি লাভবান হচ্ছেন তারা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে এবং এই চলতি মৌসুমে প্রখর খরতাপ বা পর্যাপ্ত রোদ থাকায় ধান শুকিয়ে ঘরে তুলতে সহজ হচ্ছে। শুধু যে ধান তা নয়, ধানের খড়ও শুকিয়ে সংরক্ষণ করা সহজ হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, তাদের ঘরের খোরাক হলো ধান। ঘরে ধান থাকলে তারা ধন্য। অন্যদিকে গবাদিপশুর খোরাক হলো খড়। তারা জানান, বাড়িতে খড় না থাকলে গরু-বাছুর পালা বা পোষা কঠিন। এজন্য মানুষের খাদ্য হিসেবে ধান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি গবাদিপশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ধানের খড়। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ডৌকারচর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া এবং রুমান মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, 'এখন ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে, এ বছর ধান কাটার সময় মেঘবৃষ্টি কম হওয়ায় ধান এবং খড় দুটোই রোদে সহজে শুকাতে পারছি। অন্য বছর ধান বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতো, খড় ক্ষেতের মধ্যেই পচে শেষ হতো। কিন্তু এবার এমনটা হয়নি। ধান বা খড় কোনোটাই নষ্ট হচ্ছে না। এ বছর ধান চাষ করে আমরা সবাই মোটামুটি লাভবান। ধানের ফলন গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। গতবার পোকার আক্রমণে ফলন কম ছিল, ধানের অর্ধেকই ছিল চিটা। কিন্তু এবার কোনো চিটা নেই। প্রতি কানিতে ১৮-২০ মণ ধান হয়েছে। যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি কানি জমিতে লাভ থাকছে ৫-৬ হাজার টাকা।' এ উপজেলার আদিয়াবাদ এলাকার এক কৃষক কন্যা শারমিন বেগম জানান, তাদের এলাকায় অনেকেই এ বছর সবজি চাষে লোকসান গুনেছেন। বিশেষ করে বেগুন, শসা এবং লাউ চাষ করে মিনিমাম দামটুকুও পাননি। ৫ টাকা করে লাউ, ১০ টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচ দূরের কথা সবজি বাজারে নেওয়ার ভ্যানগাড়ির ভাড়ার খরচটুকু ওঠেনি। তবে ধান চাষ করে এ বছর কারও লোকসান গুনতে হয়নি। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবং ধানের নতুন জাত উন্নয়নের ফলে এ বছর রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব একটা হয়নি। এজন্য ফলন ভালো হয়েছে। যা টার্গেট করেছিলেন তার চেয়ে বেশি ফলন হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ বছর ধান আবাদের পরিমাণ প্রায় ২২০ হেক্টর জমি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। তবে ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী- এ বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ মৌসুমে নরসিংদীর ৬ উপজেলায় সর্বমোট বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমি। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর, পলাশ উপজেলায় ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর, শিবপুর উপজেলায় ১০ হাজার ১৭২ হেক্টর, মনোহরদী উপজেলায় ১১ হাজার ৬০ হেক্টর, বেলাব উপজেলায় ৫ হাজার ৭৭০ হেক্টর এবং রায়পুরা উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর।