মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

লোহাগড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
  ২০ মে ২০২৪, ০০:০০
লোহাগড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। গেল সপ্তাহে দুর্বৃত্তদের হাতে একজন সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৩ জন খুন হয়েছেন। খুনের ঘটনার পর স্থানীয় জনমনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চাঞ্চল্যকর এসব খুনের ঘটনার পর পুলিশের কোনো পদক্ষেপেই সাধারণ মানুষজন আশ্বস্ত হতে পারছেন না। ভয়, আতঙ্ক আর চরম নিরাপত্তাহীনতায় কুঁকড়ে গেছে মধুমতী ও নবগঙ্গা পাড়ের সাধারণ মানুষজন। অব্যাহত খুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নানা মন্তব্যে সরব হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মধুমতী ও নবগঙ্গা নদীবিধৌত নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা একটি পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। গ্রাম্য কোন্দল আর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ উপজেলাজুড়ে চলে খুন-খারাবি, হামলা-মামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট। এ উপজেলার এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে কোন্দল নেই। জনপ্রতিনিধি আর মাতবরদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গ্রাম্য কোন্দলের মীমাংসা হয় না, বরং কোন্দল জিইয়ে থাকে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপেই থামে না এ অভিশপ্ত গ্রাম্য কোন্দল। ফলে সমগ্র লোহাগড়া জনপদ জুড়ে চলে সংঘাত, সহিংসতা-এ যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। গ্রাম্য কোন্দলের জের ধরে একের পর এক খুনের ঘটনায় লোহাগড়া এখন আতঙ্কিত জনপদে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। চলমান উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় ভাটা পড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গত ১০ মে রাতে লোহাগড়া বাজার থেকে একটি সালিশ বৈঠকে যোগদানের জন্য মলিস্নকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শিকদার মোস্তফা কামাল (৫৯) কুন্দশী এলাকার ছমীর শিকদারের বাড়িতে যান। কিছুক্ষণ পরই মোস্তফা মোটর সাইকেলটি আনার জন্য সেখানে গেলে দুর্বৃত্তরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

চেয়ারম্যান শিকদার মোস্তফা কামাল খুনের ঘটনায় তার ভাই রেজাউল শিকদার বাদী হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আকবর হোসেন লিপনকে প্রধান আসামি করে লোহাগড়া থানায় মামলা করেছেন। চেয়ারম্যান খুনের ঘটনার পর পুলিশ ও র?্যাব গত বৃহস্পতিবার লোহাগড়া, নড়াইল ও চট্টগ্রাম থেকে অভিযান চালিয়ে ভাড়াটিয়া কিলার সাজেদুল মলিস্নকসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এর একদিন পর ১১ মে রাতে চর মঙ্গলহাটা গ্রামে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা রিজিয়া বেগম (৭০) নামে একজন বৃদ্ধা মহিলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে জানালার গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে রেখে পালিয়ে যায়। নিহত রিজিয়া বেগম চর মঙ্গলহাটা গ্রামের শিক্ষক প্রয়াত তবিবর রহমানের স্ত্রী এবং যুবলীগ নেতা রবিউল কবীরের মাতা। হত্যার পরের দিন ১২ মে যুবলীগ নেতা রবিউল কবীর বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের নামে থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ ঘটনার কোনো 'ক্লু' উদ্ধার করতে পারেনি।

এদিকে ১২ মে রাতে লোহাগড়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র ৭নং ওয়ার্ডের লক্ষ্ণীপাশা এলাকার কলা ব্যবসায়ী কাসেম খানের বাড়ির দক্ষিণ পাশে সড়কে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ফয়সাল মুন্সী (২৫) নামে এক ভ্যানচালককে ছুরিকাঘাতে খুন করে ভ্যান ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। নিহত ফয়সাল লোহাগড়া উপজেলার লোহাগড়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের আহম্মদ মুন্সীর ছেলে।

এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন রায় জানান, চেয়ারম্যান, বৃদ্ধা এবং ভ্যানচালক খুনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান খুনের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। বৃদ্ধা রিজিয়া বেগম ও ভ্যানচালক ফয়সাল মুন্সী হত্যাকান্ডের বিষয়ে তদন্তকাজ চলছে। শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে