মুক্তাগাছায় পোলট্রি ফার্মে বেকারি স্থাপন!

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাদ্যপণ্য

প্রকাশ | ২০ মে ২০২৪, ০০:০০

মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পোল্ট্রি মুরগির খামারে গড়ে তোলা বেকারিতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন খাবার পণ্য -যাযাদি
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা কোমলমতি শিশুদের সুস্বাদু খাবার হিসেবে প্রধান পছন্দ বেকারির খাদ্যপণ্য। ক্ষুধা মেটাতে বয়স্ক মানুষদেরও খাবারের তালিকায় থাকে বেকারিতে তৈরি হওয়া মুখরোচক বিভিন্ন পণ্য। আর এটাকেই পুঁজি করে মুক্তাগাছার বিভিন্ন পাড়া-মহলস্নায় গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অনুমোদনহীন বেকারি। যেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাদ্যপণ্য। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বছরের পর বছর বানিয়ে চলছে বিস্কুট, কেক, মিষ্টি, চিনি দিয়ে তালমিশ্রিসহ নানা খাবার। তবে এসব পুরনো খবর। আঁতকে ওঠার মতো ঘটনা হলো যেখানে তিন মাস আগেও পোলট্রি মুরগির খামার ছিল সেই মুরগির সেটেই ভাই-বন্ধু নামে এক বেকারি গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। তিনি এই বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করে আসছে। সেখানে এখনো মুরগির ফার্মের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে টেকাই দুস্কর। অথচ চলছে খাদ্যপণ্য তৈরির কাজ। বিএসটিই, পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভা বা অন্যকোনো দপ্তরের সরকারি কোনো ধরনের অনুমোদন নেই। তবুও চলছে বেকারি। কোনো প্রকার ভেজালবিরোধী অভিযান না থাকায় ব্যবসা পরিচালনা করতে মালিকদের কোনো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সরেজমিন পৌর শহরের ঈশ্বরগ্রাম বটতলা এলাকার ভাই-বন্ধু বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকদিন আগেও যেখানে পোলট্রি ফার্ম ছিল সেই পোলট্রি ফার্মের সেট ঘরের সঁ্যাতসেঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি হচ্ছে বেকারির নানা ধরনের খাবার। মুরগির খাদ্যের পাত্রগুলো এখনো একপাশে স্তূপ করে রাখা আছে। ভেতরে নোংরা পরিবেশের দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। কর্মচারীদের হাত-পায়ে লেগে আছে ময়লা। কারিগরদের গায়ের ঘাম ঝরে পড়ছে খাদ্যদ্রব্য-মেঝেসহ খাদ্যপণ্যের সঙ্গে পড়ে রয়েছে বিড়ি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ। বিভিন্ন খাদ্য তৈরির সরঞ্জামে কীটপতঙ্গ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। নোংরা ও অপরিষ্কার কড়াইয়ে আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। বাসি তেল-ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিমের পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভনভন করছে। এ ছাড়া কারখানায় পাওয়া গেছে মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর বিষাক্ত কেমিক্যাল, ক্ষতিকারক রং, পচা ডিম। অভিযোগ রয়েছে খাবার তৈরিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ও নিম্নমানের পাম তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিকরা বিশেষ পোশাক ছাড়া খালি পায়ে খাবার তৈরি করছেন। উৎপাদিত খাদ্যের মান প্রণয়ন এবং গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ কোনো ব্যবস্থাও নেই। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, ড্রাইকেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি ফাস্টফুড খাবার উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি দেখে প্রথমে বেকারির ম্যানেজারসহ সবাই চমকে উঠেন। পরে একে একে কথা হয় সবার সঙ্গে। কথা বলার একপর্যায়ে ম্যানেজ্যার কামাল মিয়া পোলট্রি ফার্মের কথা স্বীকার করে বলেন তারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। তাদের কোনো কাগজ নেই, এমনকি ট্রেড লাইসেন্সও নেই। নোংরা পরিবেশের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, অন্যান্য বেকারির তুলনায় তাদের বেকারির পরিবেশ অনেক সুন্দর। ভাই-বন্ধু বেকারির মালিক খোকন পাঠান বলেন, 'অল্প কয়েক মাস হলো এখানে ব্যবসা শুরু করেছি। আগে এখানে পোলট্রি ফার্ম ছিল, আমরা পরিষ্কার করে এখানে বেকারি চালু করেছি। এখনো কোনো কাগজ হয়নি। মুক্তাগাছার কোনো বেকারিরই সঠিক কাগজপত্র নেই। সবাই যে যার মতো ব্যবসা করছে।' মুক্তাগাছা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল হানিফ মির্জা বলেন, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই একটি মুরগির ফার্মের ভেতরে কী করে এমন একটি বেকারি চলতে পারে বোধগম্য হয় না। এটা জনস্বাস্থের জন্য হুমকি। পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স বা অন্যকোনো ধরনের কাগজপত্র নেই উলেস্নখ করে তিনি দ্রম্নত তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান। উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই জানান, সেখানে সরেজমিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তাছাড়া বেকারি মালিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করতে একাধিকবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কিছুই মানতে চায় না। বিধিমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'