মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

সারিয়াকান্দিতে ভালো ফলনেও ধানের দামে হতাশ কৃষক

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে বোরো ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বোরো ধানকাটা শুরু হয়েছে। তীব্র গরম উপেক্ষা করে কৃষক মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বাজারে বর্তমানে ধানের দাম কম থাকায় তারা হতাশা ব্যক্ত করছেন।

সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর থাকলেও ১৪ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও নিবিড় পরিচর্যায় এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

বর্তমানে চলছে তীব্র তাপদাহ। এই তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও কৃষকরা একটু কষ্ট হলেও এই প্রখর রোদকে কাজে লাগিয়েই ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন। শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি পরিশোধ করেই ধান কাটাতে হচ্ছে জমির মালিকদের।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক আজাহার জানান, অপেক্ষাকৃত দূরের জমিগুলো প্রতি বিঘা ৫ হাজার টাকা এবং কাছের জমিগুলো ৪ হাজার টাকা বিঘা দরে শ্রমিক দিয়ে কেটে আনতে হচ্ছে। তবে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনে জমির ধান কাটায় অনেক কৃষকের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসছে। হারভেস্টার মেশিনে প্রতি বিঘা জমি ২৫০০ টাকা দরে কাটতে পেরে তারা কিছুটা লাভবান বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন। এই মেশিনগুলো দিয়ে অল্প সময়ে স্বল্প খরচে অনেক জমির ধান কাটা যায়।

উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মো. সুজন, আশরাফ ইসলাম জানান, তাদের বস্নকে সরকারি ভর্তুকি মূল্যের কোনো হারভেস্টার মেশিন না থাকায় শ্রমিক দিয়েই ধান কাটতে হচ্ছে। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৭ বস্নকে ২৩টি হার্ভেস্টার মেশিন রয়েছে। আরও ১৪ মেশিন পেলে প্রতি বস্নকে একটি করে মেশিন হতো। তাহলে কৃষক দ্রম্নত ধান কাটতে পারত স্বল্প খরচে।

কুতুবপুর ইউনিয়নের ছোট কুতুবপুর গ্রামের কৃষক সোনা হোসেন জানান, সরকার ভর্তুকি মূল্যে হার্ভেস্টার দেয় কৃষকের উপকারের জন্য। তাই তাদের দাবি হার্ভেস্টার মালিক যেন কোনো অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নিতে না পারে যে জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ধান কাটার মূল্য নির্ধারণ করে নিয়মিত মনিটরিং করার। বর্তমান বাজার মূল্যেও কৃষকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

কৃষক আব্দুর রহিম জানান, সরকার এক কেজি শুকনা ধানের মূল্য নির্ধারণ করছে ৩২ টাকা। সেই হিসাবে এক মণ শুকনো ধানের সরকারি মূল্য ১ হাজার ২৮০ টাকা। বাজারে কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে ৮০০ থেকে ৮৫০ দরে। এখানে ডলকের নামে প্রতি মণে ২ কেজি বেশি নেওয়া হয়। সেই হিসেবে বাজারে এক মণ কাঁচা ধানের দাম দাঁড়ায় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এতে কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সারিয়াকান্দি খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, এ বছর সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ২৮০ টাকা মণ। আর চাল ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ, তবে সরকারিভাবে এ সপ্তাহ থেকে ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি অফিসের নিবিড় পরিচর্যায় এ বছর বোরো ফলন ভালো হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আশা করছেন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার ১১২ মেট্রিক টন তাও ছাড়িয়ে যাবে।

হার্ভেস্টার মেশিনের ধান কর্তনের বিষয়ে তিনি জানান, মেশিন মালিককে ধান কাটার দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং তা নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে