রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
মিলে মিলে শ্রমিক অসন্তোষ কর্মবিরতি ঘোষণা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের জনবল স্থায়ীকরণ স্থগিত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের জনবল স্থায়ীকরণ স্থগিত

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের জনবল স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ স্থগিত আদেশের ফলে দেশের ৯ সুগার মিলের সাত শতাধিক বেতন বা মজুরি কমিশনভুক্ত শ্রমিকের স্থায়ীকরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে দেশের এসব মিলের স্থায়ীকরণ প্রত্যাশী শ্রমিকরা কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এর আগে গত বুধবার বিকালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব চৌধুরী রুহুল আমি কায়সার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিতের এ আদেশ দেন। এ সংবাদ মিল এলাকায় পৌঁছলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা জরুরি গেট মিটিংয়ের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে জনবল স্থায়ীকরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলেও জানান বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক নেতারা।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মোবারকগঞ্জ সুগার মিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক সাইদুর রহমান পিকুসহ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী। জানা যায়, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল মৌসুমি জনবল দ্বারা স্থায়ী শূন্যপদে স্থায়ীকরণের ৫১ পদের বিপরীতে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন সংস্থাপন বিভাগ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রায় শতাধিক প্রার্থী ওই পদের বিপরীতে আবেদন করেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে করপোরেশনের হেড অফিস থেকে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার মিলে পৌঁছে পরীক্ষা নেন। বৃহস্পতিবারও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করে আদেশ দেয় করপোরেশন। একই সময়ে দেশের ৯ মিলে মৌসুমি জনবল দ্বারা সাত শতাধিক শূন্যপদে স্থায়ীকরণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। একাধিক মিল থেকে এমন অভিযোগ করপোরেশেনের হেড অফিসে পৌঁছলে ১৫ মে স্থায়ীকরণ স্থগিত করার আদেশ দেওয়া হয়। যদিও শ্রমিক নেতারাও করপোরেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ বাণিজ্য ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন।

মোবারকগঞ্জ সুগার মিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল জানান, দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর এ মিলে প্রায় শতাধিক কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বুধবার শ্রমিকদের নিয়োগ, পদন্নতি ও স্থায়ীকরণের জন্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবারও পরীক্ষা ছিল। কিন্তু অজানা কারণে হেড অফিস থেকে জনবল সমন্বয় প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। এর ফলে মিল এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি এখনই স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া শেষ করা না হলে আসছে মাড়াই মৌসুমে মিল চালানো সম্ভব হবে না। ফলে দ্রম্নত শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ সম্পন্ন না করলে ঈদুল আজহার পর মিলে সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক জানান, দেশের প্রতিটি মিলে দক্ষ শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। চলমান জনবল সমন্বয় বা স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করার সংবাদ পাওয়ার পর শ্রমিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে কর্মবিরতি করছেন। একটি মহল দেশের চিনি শিল্প ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন অসত্য অভিযোগ তুলে জনবল স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ করেছে। করপোরেশনের কর্মকর্তারা এ অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। আগামী দুই বছরের মধ্যে অস্থায়ী ও মৌসুমী দক্ষ শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ না করলে মিলে আখ মাড়াই করা সম্ভব হবে না।

মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মিলে ৫১ পদের বিপরীতে বুধবার মৌসুমি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই দিন বিকালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের হেড অফিস অনিবার্য কারণে নিয়োগ, পদন্নতি এবং স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া স্থগিত করে। এর ফলে মিলের কাজে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে মিলটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য শ্রমিকদের নিয়োগ ও পদন্নতি এবং স্থায়ীকরণের প্রয়োজন।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিক চৌধুরী রুহুল আমি কায়সার জানান, করপোরেশনের ৯ মিলে প্রশাসন, হিসাব, কৃষি ও কারখানা বিভাগের বিভিন্ন পদে সাত শতাধিক পদে বেতন ও মজুরি কমিশনভুক্ত মৌসুমি জনবল থেকে স্থায়ীকরণ বা সমন্বয়ের জন্য আলাদা আলাদা দিনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী এসব মিলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে স্থায়ীকরণে পরীক্ষা চলমান ছিল। এরমধ্যে একটি মাত্র মিল দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডর জনবল স্থায়ীকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি মিলগুলোর বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ লেনদেনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ফলে করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশে জনবল সমন্বয় বা স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে