শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

শিবচরে লিটন চৌধুরী সেতু বদলে দিয়েছে লাখো মানুষের জীবনধারা

এস এম দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর)
  ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
মাদারীপুরের শিবচরের 'লিটন চৌধুরী সেতু' -যাযাদি

মাদারীপুর শিবচর উপজেলায় ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু বদলে দিয়েছে পুরো জনপদের জীবন। উপজেলার উৎরাইল ইউনিয়নের উৎরাইল হাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত লিটন চৌধুরী সেতু বদলে দিয়েছে দুই পাড়ের লাখো মানুষের ভাগ্য। গ্রামীণ এ জনপদে সূচিত হয়েছে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত।

একে শুধুই একটি সেতু বললেও স্থানীয়দের কাছে তা কেবলই সেতু নয়; লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম নদীর ওপর একটি সেতুর স্বপ্ন দেখে বেড়ে উঠেছে। আর ৫৫০ মিটারের লিটন চৌধুরী সেতুটি যেন হাজার বছরের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়। ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০২৪ সালে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপজেলার উৎরাইলসহ দত্তপাড়া, নিলখী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম। এতে উপকারভোগী গ্রামগুলোর মানুষ বেশ খুশি। গড়ে উঠেছে সেতুর দুই প্রান্তে বিভিন্ন দোকানপাট।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, 'আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর লিটন চৌধুরী সেতু নির্মাণের ফলে আমাদের গ্রামের মানুষ বেশ উপকৃত হয়েছে। এ সেতুর অভাবে পাশের গ্রামগুলো ও শিবচর সদরের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। নদীর এপাড়ের সঙ্গে ওপাড়ের মানুষের ইচ্ছা থাকলেও মেলবন্ধন হতো না। লিটন চৌধুরী সেতুটি যেন হাজার বছরের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিল। এ জন্য চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীকে ধন্যবাদ।'

দবির মাদবর নামের আরেক স্থানীয় জানান, শিবচরে বিভিন্ন কাজে যেতে হলে নৌকায় ১০ টাকা দিয়ে পার হওয়া লাগত। এখন নিমেষেই নদী পার হচ্ছি। শিবচর, শেখপুর যেখানে ইচ্ছা চলে যাচ্ছি।'

উৎরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। আগে সড়ক পথে সূর্যনগর হয়ে পাঁচ্চর ঘুরে সদরে যেতে সময় লাগত প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। এখন সেতু হয়ে যাওয়ায় মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই যাওয়া আসা করা যায়।

উৎরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, উৎরাইলবাসীর দুঃখ 'আড়িয়াল খাঁ নদ' এর কারণে এ অঞ্চলটি শিবচর সদরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজলভ্য ছিল না। বিধায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে যুগ যুগ ধরে এ জনপদ অবহেলিত ছিল। ব্রিজটি এলাকার মানুষের স্বপ্ন ছিল। বাস্তবায়ন হওয়ায় পুরো এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। যাতায়াত সহজ হয়েছে। চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীর অবদানে এটি সম্ভব হয়েছে।

শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কে এম রেজাউল করিম বলেন, ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে উপজেলার তিন ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ উপকার পাচ্ছেন।

শিবচর ইউএনও আবদুলস্নাহ আল মামুন বলেন, লিটন চৌধুরী সেতুটি দুইপারের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। ফলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি দূরত্ব কমেছে এবং যাতায়াত খরচ কমে যাওয়ায় কারণে অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। গড়ে উঠেছে দোকানপাট এবং ব্যবসা বাণিজ্য। সম্ভাবনার দুয়ার খোলায় একটা সেতুতেই পাল্টে গেছে এলাকাগুলোর চিত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে