টার্গেট কোরবানির পশুর হাট

গরু মোটা তাজাকরণে ব্যস্ত শাহজাদপুরের খামারিরা

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০

এমএ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কয়েক হাজার খামারি গরু মোটা-তাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে শাহজাদপুরের পশুর হাটগুলোতে জমতে শুরু করেছে কেনাবেচা। দুধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার খামারে প্রায় লক্ষাধিক কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। খামারগুলোয় চলছে পশু হৃষ্টপুষ্টকরণের কাজ। দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। অনেক খামারি কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করে কোটি টাকার ওপর লাভ করার আশা করছেন। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে দেশি ও বিদেশি জাতের ফ্রিজিয়ান, গির, শাহীওয়াল, দেশি শংকর, অস্ট্রেলিয়ান ও জার্সিসহ বিভিন্ন জাতের ষাঁড় বাছুর কিনে হৃষ্টপুষ্ট করছেন। মাত্র ৬-৮ মাসে এঁড়ে বাছুর লালন-পালন করে কোরবানির ঈদের গরুর হাটে বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়েও বিনিয়োগের চেয়ে বেশি অর্থ আয় করতে পারবেন বলে গৃহস্থ ও খামারিরা আশা প্রকাশ করেছেন। উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ী, পোতাজিয়া, নুকালী, বায়ড়া, রাউতারা, কাকিলাবাড়ী, চরা চিথুলিয়া, হাবিবুলস্নাহনগর ইউনিয়নের বাজিয়ার পাড়া, রতনকান্দী, ফরিদপাঙ্গাসী, ডায়া, কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃআঙ্গারু, চুলধরি, চর অঙ্গারু, চিথুলিয়া, হরিরামপুর, ব্রজবালা, গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর, সরিষাকোল, নবীপুর, টেপড়ি, তালগাছী, পোরজনা ইউনিয়নের নন্দলালপুর, বড় বাচড়া, পুঠিয়া, বড় মহারাজপুর, ছোট মহারাজপুর, উল্টাডাব, চরকাদাই, জামিরতা কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর, হাট পাঁচিল, পাথালিয়াপাড়া, ররুপবাটি ইউনিয়নের বাঘাবাড়ী মোলস্নাপাড়া, খামারশানিলা, চয়ড়া, আহম্মদপুর, করশালিকা, দুগালী মোয়াকোলা, শেলাচাপড়ি, নরিনা ইউনিয়নের জয়রামপুর, যুগ্নীদহ, নাববলিা, বাচামরা, বেলতৈল ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া, বেতকান্দী, ঘোরশাল, খুকনী ইউনিয়নের কালিপুর, কামালপুর, শিবপুর, সোনাতলা, জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর, রূপসী, মুলকান্দী এবং যমুনা চরের সোনাতনী ইউনিয়নের বানতিয়ার, বড় চাঁনতারা, ছোট চানতারা, শ্রীপুর গ্রামের কয়েক হাজার গরুর খামারে গরু মোটা-তাজাকরণ চলছে। একেকটি বড় খামারে ৫০ থেকে ১০০টি গরু এবং ছোট খামারে ৫ থেকে ২০টি গরু মোটা-তাজা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব খামার থেকে বেপারীদের কাছে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। খামারগুলোতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মোটা-তাজা করা হচ্ছে নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহীওয়াল জাতের গরু। ঘোড়শাল নতুনপাড়ার খামারি শহিদুল ইসলাম ঠান্ডু জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে অতি অল্পসময় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার ফার্মে প্রায় ২০টি পশু হৃষ্টপৃষ্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ৪০ মণ ওজনের সাদা-কালো রঙের পারহা-পারহি 'অস্ট্রেলিয়ান জাতের ফ্রিজিয়ান' ষাঁড়। গরুটির নাম রাখা হয়েছে 'নাতিবাবু'। উপজেলা কাঁপিয়ে তুলছে এই 'নাতিবাবু'। গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। রতনকান্দী গ্রামের বিশিষ্ট গরু ব্যবসায়ী এবং খামারি আক্তার হোসেন জানান, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য তিনি গত ১০ বছর ধরে গরু লালন-পালন করে আসছেন। এ বছরও ৩০টি গরু তৈরি করেছেন। রাজধানীর গাবতলী অথবা নারায়ণগঞ্জের ফতুলস্না হাটে নিয়ে তা বিক্রি করবেন। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিলস্নাল হোসেন জানান, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শাহজাদপুরে প্রায় ৮৬ হাজার ৬৬১ পশু প্রস্তুত করছে খামারিরা। এর মধ্যে ষাঁড় গরু রয়েছে ৫৫ হাজার ৪২০টি, বলদ রয়েছে ৩ হাজার ৬১৫, গাভী রয়েছে ২ হাজার ৫৫০, ছাগল ১৭ হাজার ৭৭১টি ও ভেড়া রয়েছে ৭ হাজার ৩০৫টি। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করার কাজে উপজেলা পানিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা, ভ্যাকসিন ও বিনামূল্যে নিরাপদ গো-খাদ্য সাইরেজ প্রদান করা হচ্ছে। খামারিরা এ বছর বেশি আয় করতে পারবেন বলে তার আশা।