নতুন প্রাণ পাচ্ছে 'সততা স্টোর'

যশোরের ১৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুদকের অর্থ বরাদ্দ

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
যশোরের কালেক্টরেট স্কুলে স্থাপিত 'সততা স্টোর' থেকে পণ্য কিনে পাশে থাকা বক্সে টাকা রাখছে শিক্ষার্থীরা -যাযাদি
নতুন প্রাণ পাচ্ছে 'সততা স্টোর'। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক'র উদ্ভাবন মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় স্থাপিত এই 'সততা স্টোর'কে আরও গতিশীল করতে নতুন অর্থায়ন করা হচ্ছে। এ বছর যশোরের ১৭৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় অর্থ বরাদ্দ করেছে দুদক। 'সততা স্টোর' গতিশীল করার মাধ্যমে কৈশোরেই শিক্ষার্থীরা লোভ-লালসা ত্যাগ করে সততার সঙ্গে বেড়ে ওঠার 'হাতে-কলমে' নতুন পাঠ গ্রহণ করবে বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক মো. আল-আমিন জানান, মানুষের ভালো গুণগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সততা। লোভ-লালসা ত্যাগ করে সৎ থাকাটা খুবই কঠিন ব্যাপার। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন সৎ ব্যক্তিত্ব উঠে আসে, সেজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন বের করেছে এক অভিনব কৌশল। আর সেটি 'সততা স্টোর'। খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতি, নৈতিকতা ও সততার আদর্শ গড়ে তোলার জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে দুদকের অর্থায়নে গঠন করা হয় সততা স্টোর নামে এই ব্যতিক্রমধর্মী দোকান। ব্যতিক্রমধর্মী দোকানগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো তাতে পণ্যসামগ্রী থাকবে, কিন্তু কোনো বিক্রেতা বা সিসি ক্যামেরা থাকবে না। তবে দেয়ালে টাঙানো থাকবে পণ্যের মূল্য তালিকা। কিছু কিনতে হলে স্টোরে থাকা সংশ্লিষ্ট খাতায় পণ্যের বিবরণ লিখতে হবে শিক্ষার্থীকে। এরপর শিক্ষার্থী তার পছন্দমতো পণ্য কিনে পাশে থাকা টাকা জমা দেওয়ার বক্সে টাকা রাখবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত এসব 'সততা স্টোর'র মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরস্পর সৎ হওয়ার প্রতিযোগিতা করবে। এভাবেই শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে দুদক বিশ্বাস করে। সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম সততা স্টোর ধারণার সূচনা করে। দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে সততা স্টোর স্থাপনের জন্য কমিশন প্রতি বছর অর্থায়ন করে আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, যশোরের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে যশোর ও নড়াইল জেলার মোট ২৪টি বিদ্যালয়ে সততা স্টোরের জন্য স্কুলপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২৫০টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে মোট ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলার ১৭৫টি স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। যশোর সদর উপজেলায় ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৭টি উপজেলায় ২০টি করে মোট ১৪০টি প্রতিষ্ঠানে এই অর্থ বরাদ্দ হয়। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থ বিতরণও শুরু হয়েছে। যশোর শহরের কালেক্টরেট স্কুলে চালু রয়েছে সততা স্টোর। স্কুলের অধ্যক্ষ মোদাচ্ছের হোসেন জানান, সরকারের কর্মপরিকল্পনায় শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ জাগ্রত করে সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকার অনুশীলনের জন্য সততা স্টোর স্থাপন করা হয়েছে। দুদক থেকে দশ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে গত বছর সততা স্টোরটি চালু করেছিলেন। এখন সেই মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। সততা স্টোর থেকে কোমলপানীয় কিনতে আসা কালেক্টরেট স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুলস্নাহ আল সাবিত জানায়, 'সততা স্টোর থেকে আমরা পণ্য কিনে নিজেরাই মূল্য পরিশোধ করছি। এর মাধ্যমে সৎ থাকার শিক্ষা গ্রহণ করছি।' দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, যশোর জেলা সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি, 'সততা স্টোর' থেকে যেসব শিক্ষার্থী পণ্য কিনছে, পণ্য কেনার পাশাপাশি তাদের দিতে হচ্ছে সততা এবং বিবেকের পরীক্ষা। যে কেউ চাইলে এখান থেকে মূল্য পরিশোধ না করে চুপিচুপি পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারবে, কিন্তু তারা সেটা করছে না। কারণ, এটি একটি সততা চর্চাকেন্দ্র।