শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

কাঁচা ধান নিয়ে শঙ্কায় পাবনার চাষিরা

পাবনা প্রতিনিধি
  ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
পাবনায় জমিতে থাকা আধা কাঁচা-পাকা বোরো (ব্রি, বিনা) ধান -যাযাদি

পাবনায় বোরো (ব্রি, বিনা) ধান এখনো পাকেনি। জেলার কোথাও খেতে ধানের থোড় এসেছে, কোথাও কলা পাকার মতো হয়েছে, আবার কোথাও রয়েছে আধাপাকা। ধান কাটার মতো হয়নি। এরই মধ্যে আবহাওয়া অফিস ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে জেলার কৃষকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। শেষ সময়ে এসে কষ্টের ফসল হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

জানা যায়, পাবনার কৃষকরা এবার প্রচন্ড দাবদাহ ও খরার কারণে বোরো মাঠে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারেননি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক কষ্টে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন তারা। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে ব্রি, বিনা-বোরোতে চিটা হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। চাষিদের টানা খরার কবলে বোরো আবাদে সেচ খরচও বেড়েছে। জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আথাইলশিমুল গ্রামের কৃষক আবু বকর বলেন, এ বছরের মতো খরা কখনো দেখেননি তিনি। প্রতিদিনই জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। তার পরও পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। একই গ্রামের কুষক সুরুজ আলী বলেন, রেশনিং পদ্ধতিতে সেচ মালিকরা পানি দিয়েছেন। তিনি বলেন এ বছর ফলন কম হবে। সদর উপজেলার দোগাছি গ্রামের কৃষক তপু মিয়া বলেন, এবার টানা খরায় সেচ ও কীটনাশক দিয়েও খুব একটা কাজ হয়নি। ফসলের অবস্থা খুবই খারাপ। বোরো ধান এখন আধাপাকা আছে। ধান ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাটার উপযোগী হবে। এর মধ্যে ঝড়-শিলাবৃষ্টি হলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আটঘরিয়া, সাঁথিয়া, চাটমোহর উপজেলার ধান চাষিরা চিন্তায়। সাঁথিয়ার শেলন্দা গ্রামের কৃষক রমজান আলী বললেন, আকাশে মেঘ দেখলেই ভয় করে। শিলাবৃষ্টি হলে তার তিন বিঘা ধানের খেতের ধানের থোড় অধিকাংশ নষ্ট হবে। মানসিক চাপে ভুগছেন তিনি।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বললেন, এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে চাটমোহর উপজেলায় ৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। তার পরেই আছে সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৬৩৮ হেক্টর। জেলায় মোট আবাদের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৮৩২ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ টন। বর্তমানে মাঠে হাইব্রিড, ব্রিধান ২৮, ২৯, ৫০, ৫৮, ৮১, ৮৪, ৮৬, ৮৯, ৯০, ৯২, ৯৬, ১০০, বিনাধান ১৪, ১৮, ১৫, ২৫সহ নানা জাতের ধান রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকদের বলা হয়েছে, শতকরা ৮০ ভাগ ধান কাটার যোগ্য হলে পুরো ধান কেটে ফেলতে। এতে উৎপাদনের কোনো হেরফের হবে না। তিনি আশা করেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, ধানের ফুল আসার জন্য সর্বোচ্চ সহনীয় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর একদিকে ছিল তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে বৃষ্টি পায়নি বোরো ক্ষেত। এরকম তাপ পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় বিদু্যৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে বিদু্যৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়। যাতে কৃষক সেচ দিতে পারেন। তিনি বলেন, ঝড়ঝাপ্টা হতেই পারে এখন। প্রকৃতির উপরে মানুষের হাত নেই। তবে এ অবস্থায় ঝড়-বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়বে চাষিদের জন্য। কৃষকের ফসল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক জানান, পাবনায় ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে