শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১
বীজ থেকে তেল বিক্রিতে লাভ বেশি

সূর্যমুখীর তেল উৎপাদনে ঝুঁকছেন পটুয়াখালীর কৃষক

আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
  ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
পটুয়াখালীতে সমন্বিত পরিকল্পনায় বিস্তীর্ণ জমিতে আবাদ করা সূর্যমুখী ফুল -যাযাদি

সমন্বিত পরিকল্পনায় এবার পটুয়াখালীতে বিস্তীর্ণ জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখী আবাদ থেকে শুরু করে পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ, মজুত, তেল উৎপাদন, তেল ও খৈল বাজারজাতকরণেও কৃষক দলবদ্ধভাবে কাজ করছেন। ফলে বিগত বছর থেকে এবার সূর্যমুখী চাষে কৃষকরা অনেক বেশি লাভের মুখ দেখছেন। পটুয়াখালী 'পলস্নী প্রগতি সমিতি' নামে একটি স্থানীয় এনজিও কৃষকদের এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের শিয়ালীগ্রামে এবার ১২০ বিঘা জমিতে একসঙ্গে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন এখানকার ৩৪ জন কৃষক। তাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে উন্নত মানের বীজ ও জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট)। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি ফসলে পোকা মাকড়ের আক্রমণে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব বালাইনাশক। আর আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে বিগত বছরগুলোর থেকে এবার ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। তাইতো কৃষকের মুখে এখন আনন্দের হাসি।

স্থানীয় কৃষক সামছু গাজী বলেন, 'পাশাপাশি সব জমিতে একই ফসল চাষ করায় সমস্যা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারছি। এতে করে কোনো রোগবালাই কিংবা সমস্যা হলে পরামর্শ করে দ্রম্নত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারছি। ভিন্ন ভিন্ন চাষাবাদ করলে বীজ, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে অনেক সময় নকল পণ্য কিনে প্রতারিত হতে হতো। পাশাপাশি দাম নিয়ে অনেককে ঠকতে হতো। তবে সমন্বিতভাবে চাষাবাদ করায় সব কিছু এক সঙ্গে একটি বাড়তি শক্তি কাজ করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী ক্ষেতের নিরাপত্তায়ও সবাই কাজ করছি। ফলে এবার কেউ ফুল কিংবা বীজ নষ্ট করেনি।'

একই এলাকার কৃষানি আছিয়া বেগম বলেন, 'আগে সূর্যমুখী উৎপাদন করলেও তেল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করতে নানা সমস্যায় পরতে হতো। কৃষক যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় সূর্যমুখী ভাঙ্গিয়ে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন সে জন্য প্রকল্পের পক্ষ থেকেই আধুনিক তেল সংগ্রহের মেশিন বসানো হয়েছে। এতে আমরা এখন সরাসরি সূর্যমুখী বিক্রি না করে নিজেরাই তেল উৎপাদন করে বিক্রি করছি। এছাড়া সূর্যমুখী ভাঙানোর পর যে খৈল পাচ্ছি তা গরুর খাবার হিসেবেও খাওয়ানো যাচ্ছে।'

পটুয়াখালী পলস্নী প্রগতি সমিতি ভেলু চেইন ফেসিলেটর কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা সংকট থেকে কৃষকদের রক্ষার পাশাপাশি তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে বেসরকারি সংস্থা 'পলস্নী প্রগতি সমিতি' কাজ করছে। সূর্যমুখীর পাশাপাশি তারা যাতে সাথী ফসল হিসেবে কিছু সবজি চাষ করতে পারেন সে জন্যও বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা এর ফলে তাদের আর্থ-সামজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির সম্প্রসারণে আগ্রহী হবেন।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের ঝুঁকি অনেকটা কম, বিশেষ করে এটি লবণাক্ত এবং তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় অনেক অনাবাদি জমিতেও এখন সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সূর্যমুখী বীজের মানের উপর বিবেচনা করে প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে