পূর্বধলায় দামে ধস

এক মণ ধানের মূল্যে মিলছে না এক কেজি গরুর মাংস

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগরে 'মাজরা' পোকার আক্রমণে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া ধান -যাযাদি
বর্তমানে বোরো ধানের ভরা মৌসুমে ধানের দামে ধস নেমেছে। বাজারে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭৫০ টাকা দরে। এক মণ ধানের দামে এক কেজি গরুর মাংসও কিনতে পারছেন না কৃষক। এতে উপজেলার কৃষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। পূর্বধলা সদর বাজার, হোগলা বাজার, শ্যামগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে প্রতিদিন প্রচুর ধান কেনা-বেচা হচ্ছে। পূর্বধলা সদর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মোমেন জুয়েল জানান, পূর্বধলা বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান কেনা-বেচা হচ্ছে। এ সব ক্রয়কৃত ধানের সিংহভাগই যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। ধানের দাম কমের বিষয়ে বলেন, বাজারে ধানের সরবরাহ বেশি থাকায় এবং ধান কাঁচা থাকায় ধানের দাম একটু কম ছিল, তবে এখন উঠতে শুরু করেছে। হোগলা বাজারে ৫০ মণ ধান বিক্রি করেছেন হোগলা ইউনিয়নের চলিতডহর গ্রামের কৃষক শহিদ মিয়া। তিনি বলেন, 'আমি ৪২ কেজি মণে ৭৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ডলকের নামে প্রতি মণে ২ কেজি অর্থাৎ ৫০ মণ ধানে আড়াই মণ (১০০ কেজি) বেশি দিতে হয়েছে।' তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আরও বলেন, 'এক মণ ধানের দামে এখন এক কেজি গরুর মাংসও কিনতে পারছি না। বতর্মানে এক কেজি গরুর মাংস ৮০০ টাকা।' অপর কৃষক বুলবুল আকন্দ জানান, 'বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক মহাজন ধানের দামই বলতে চায় না। তারা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কম বলে। অথচ এক মণ ধান উৎপাদন করতে আমাদের খরচ হয় প্রায় ৮শ' টাকার মতো। মহাজনদের ঋণ পরিশোধ ও ধান কাটার খরচ মেটাতে লোকসানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।' উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আইয়োব আলী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। সরকার ধানের মূল্য ১২৮০ টাকা মণ করলেও ব্যবাসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়। এজন্য কৃষকদের ঠকতে হয়। ধান কাটা মৌসুমে কৃষকদের হাতে টাকা থাকে না। তাছাড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়েই তারা কাঁচা ধান বিক্রি করেন। তাই তিনি দাবি করেন ধানকাটা মৌসুমে কৃষকদের বিনা সুদে স্বল্প মেয়াদি (দুই মাস) ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হলে ধান রক্ষণাবেক্ষণ করে পরে বেশি দামে বিক্রি করতে পারত। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলমগীর কবির জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৪১৪ মে. টন ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা খন্দকার মুনতাসির মামুন জানান, এ বছর এক মণ শুকনা ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৩২ টাকা কেজি দরে ১২৮০ টাকা মণ। তাছাড়া এক কেজি সিদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা, আতপ চালের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৪৪ টাকা কেজি। এ বছর উপজেলায় ২১৯৯ মে. টন ধান, ১১৮৬ মে. টন সিদ্ধ চাল ও ১২৪৫ মে. টন আতপ চাল কেনা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই সরকারিভাবে ধান ক্রয় করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। মণ প্রতি ঢলকের নামে দুই কেজি বেশি নেওয়ার বিষয়ে বলেন, সরকারিভাবে ক্রয়ের সময় ২ কেজি বেশি নেওয়া হয় না। তবে জানতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা যে মাপে কেনেন সেই সেই মাপেই বিক্রি করেন।