বিষাক্ত আগাছা 'পার্থেনিয়াম' ভরে গেছে মেহেরপুরের রাস্তাঘাট

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০

গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর
মেহেরপুরের রাস্তাঘাট ভরে গেছে বিষাক্ত আগাছা- নীরব ঘাতক পার্থেনিয়াম। পার্থেনিয়াম বিষাক্ত আগাছা- নীরব ঘাতক হিসেবে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। ব্যাপকহারে কমিয়ে দেয় ফসলের ফলন, প্রাণঘাতী গবাদি পশুর জন্য। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেড়েই চলেছে এই উদ্ভিদ। এই ভয়ংকর আগাছা এখন মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়ক ও অনাবাদি জমিতে ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আগাছার প্রভাব বৃদ্ধি পেলে জীব বৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। বিনষ্ট হতে পারে মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ। জমির ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্তসহ মানুষ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ কৃষি বিভাগের। মেহেরপুরের অধিকাংশ সীমান্ত এলাকা হওয়ায় কয়েক বছর আগে বিভিন্ন সড়কের দু'পাশে অল্প দেখা দিলেও এই আগাছা এখন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মুজিনবনগর-দর্শনা, প্রধান সড়ক ও মেহেরপুর-শোলমারি-কাথুলীসহ জেলার প্রায় সব রাস্তায় এবছর ব্যাপকহারে পার্থেনিয়াম দেখা যাচ্ছে। এসব পার্থেনিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করাসহ অপসারণ বিষয়ে কাউকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পার্থেনিয়াম অপসারণসহ এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এখন সময়ের দাবি। সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, 'চার-পাঁচ বছর আগেও এই আগাছা দেখিনি। এখন জেলার প্রতিটি সড়কের দু'ধারসহ অনাবাদি পতিত জমিতে ক্ষতিকর পার্থেনিয়াম আগাছায় ভরপুর। অথচ এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় আগাছাটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।' পৌর ৫নং ওয়ার্ড দিঘিরপাড়ার সংবাদপত্র বিক্রেতা জামশেদ খাঁন বলেন, 'আমার বাড়ি থেকে বের হলেই মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়ক। ওই সড়কের দু'ধারে ব্যাপকহারে পার্থেনিয়াম আগাছা জন্মেছে। এর মধ্যেই গবাদিপশু চরে বেড়াচ্ছে। মানুষ চলাফেরা করছে। এখন শুনলাম এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। আমার বাড়ির আশপাশ আমি পরিষ্কার করব।' গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মসজিদের মোয়াজ্জিন আলি আহাম্মদ বলেন, 'আমাদের মসজিদের পাশেই সামান্য অনাবাদি জমি পড়ে রয়েছে। ওই জমিতে কোথা থেকে যেন এই আগাছায় ভরে গেছে। আমরা গেল বুধবার ওই আগাছা কেটেছি। আগাছা কাটার পরে আমাদের শরীরে চুলকানি দেখা দিয়েছিল। চুলকানো স্থান ফুলে গিয়েছিল। মেহেরপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, এই পুরো আগাছাটিই সম্পূর্ণ ক্ষতিকর। বিশেষ করে ফুলের রেণুতে অবস্থিত 'সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন' জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ 'পার্থেনিন'। ফুলের রেণু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়। গরু এই আগাছা খেলে তার অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়। এর পুষ্পরেণু বেগুন, টমেটো, মরিচের মতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত করে। মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণের প্রক্রিয়াও ব্যাহত করে। পার্থেনিয়াম ভক্ষণে মোষ, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া ও ছাগলের মুখে ও পৌষ্টিকতন্ত্রে ঘা, যকৃতে পচন প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়। যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। কারণ তাদের চামড়ায় এই রস লাগলে, সেখানে ক্যান্সার হতে পারে। তাই এটা দ্রম্নত নির্মূল করা প্রয়োজন। জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালাদার যায়যায়দিনকে বলেন, আগাছাটি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মাঠ দিবসে এটির ক্ষতিকর দিকগুলো কৃষকদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ১-১.৫ কেজি হারে আগাছা নাশক মেট্রিবুজিন প্রয়োগ করলে এই গাছ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়। খাদ্য লবণের ১৫% দ্রবণে (১ লিটার পানি+১৫০ গ্রাম লবণ) আগাছার ওপর ছিটিয়ে দিলে আগাছা শুকিয়ে যায়। তারপর শুকনো গাছে আগুন ধরিয়ে দিলেই ধ্বংস করা যায় সহজেই।