যশোরে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ডিমলায় ভুট্টা মাড়াইকলে, রাজারহাটে ধান সিদ্ধ করা আগুনে পুড়ে নিহত দুই পাঁচ জেলায় নববধূ ও গৃহবধূসহ আরও ৬ জনের অপমৃতু্য

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
যশোরে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, নীলফামারীর ডিমলায় ভুট্টা মাড়াইকলের চাকার আঘাতে নারী ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ধান সিদ্ধ করা আগুনের কুন্ডলিতে পড়ে শিশুর মৃতু্য হয়। এছাড়াও নববধূ ও গৃহবধূসহ পাঁচ জেলায় আরও ৬ জনের অপমৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, যশোরে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার রাত ১০টার পর শংকরপুর আকবরের মোড় বারেক সড়কে। নিহত নূর হোসেন ওই এলাকার নজরুল মোলস্নার ছেলে ও আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের ছাত্র। স্বজনরা জানান, শুক্রবার শংকরপুরে ফুটবল টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে গোলযোগ বাধে। স্থানীয়রা মীমাংসার চেষ্টা করে। কিন্তু রেশ থেকে যায়। শনিবার রাতে শংকরপুর চোপদারপাড়া এলাকার পচা, কানা রনি, রিয়াদ, মনিরসহ আরও কয়েকজন যুবক এসে নুরকে ছরিকাঘাত করে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। এ সময় আশপাশের লোকজন এসে নুরকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তীতে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করেন। খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথে রাত ১২টার দিকে নুরের মৃতু্য হয়। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ফুটবল টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, নীলফামারীর ডিমলায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুট্টা মাড়াইকলের চাকার আঘাতে নাসিমা বেগম নামের দুই সন্তানের জননী নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার নিহতের বাড়িতে ক্ষেতের ভুট্টা মাড়াই করার জন্য ভাড়ায় ভুট্টা মাড়াই মেশিন চলছিল। হঠাৎ ওয়েট চাকা ভেঙে শয়ন ঘরে ছিটকে যায়। দুই সন্তানসহ বিছানায় শুয়ে থাকা নাসিমা বেগমের মাথায় আঘাত লাগে। এতে মাথা ফেটে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃতু্য হয়। ডিমলা থানার ওসি দেবাশীষ কুমার রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্থানীয় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রাফসান জানি এমিল (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ না পাওয়ায় রোববার গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহত ছাত্র রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লালদীঘি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। পরিবার ও পুলিশ জানায়, এ বছর রাফসান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট আসায় কান্নাকাটি করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে ঘরের বাঁশে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দেয়। অন্যদিকে রোববার সকালে সৈয়দপুরের কয়া গোলাহাট সরকার পাড়া এলাকায় তিন সন্তানের জননী লাইলি বেগম (৪২) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে। সৈয়দপুর থানার ওসি শাহা আলম বলেন, দুটি ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মোটর সাইকেল কিনে না দেওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে রাহাতুল ইসলাম (২০) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সন্তোষপুর গ্রামে শনিবার রাতে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। মৃত রাহাতুল ইসলাম ওই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে ৪ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করেন। খবর পেয়ে রোববার সকালে মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা। রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ধান সিদ্ধ করা আগুনের কুন্ডলিতে পড়ে দেড় বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের সুখদেব গ্রামের মাসুদ রানার দেড় বছরের ছেলে আরদিয়ানকে নিয়ে মা আঁখি আক্তার বাবার বাড়ি রতিগ্রাম মন্দির গ্রামে বেড়াতে যান। ঘটনার দিন গত ৪ মে সন্ধ্যায় আজিজুলের বাড়িতে ধান সিদ্ধ করে আগুন কুন্ডলি না নিভিয়ে রাখে। এসময় খেলতে গিয়ে আরদিয়ান ওই আগুনের কুন্ডলিতে পড়ে যায়। এতে তার শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার শিশুটি মারা যায়। গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, মেহেদির রং মুছতে না মুছতেই শনিবার বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছাল ফারিয়া হাসান ইতির (২৫) মরদেহ। ইতি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুর রশিদের মেয়ে। বাবার অভিযোগ, মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন, ঘাড়ে ৩টি ইনজেকশনের সুইয়ের দাগ, হাতে বেস্নড দিয়ে কাটা ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। বাম হাত ভাঙা, কানের একাংশে কালো দাগ রয়েছে। তাকে নির্মমভাবে আঘাতের পর হয়তো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের স্বামী শাকিরুল হক শুভকে (৩০) আটক করা হয়েছে। ইতির স্বামী শুভর বাবা ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বালুয়াপাড়ার গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান (ডা. রায়হান) জানান, 'আমি প্রথম শুনেছি আমার পুত্রবধূ ইতি অসুস্থ। পরে জানলাম সে আত্মহত্যা করেছে। ঘরের দরজা ভেঙে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করেছে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্ভবত মনোমালিন্য চলছিল।' লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় রিজিয়া বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই মৃতু্যর রহস্য নিয়ে জনমনে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার মলিস্নকপুর ইউনিয়নের চর-মঙ্গলহাটা গ্রাম থেকে ওই বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই গ্রামের মৃত তবিবর রহমানের স্ত্রী। থানার ওসি কাঞ্চন রায় মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতের ছেলে যুবলীগ নেতা রবিউল কবির জানান, উপজেলা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মায়ের লাশ দেখতে পান। পরে তার ডাকচিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি আরও বলেন, 'আমার মায়ের কাছে সব সময় কমবেশি টাকা-পয়সা এবং স্বর্ণালংকার থাকত। আমাদের গ্রামের সবাই সেটা জানেন। মা বাড়িতে একাই থাকেন। এই সুযোগ দুর্বৃত্তরা কাজে লাগিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে আমার ধারণা।' নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দোলন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের মেলান্দহে নুপুর আক্তার (১৭) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার সকালে উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দী পশ্চিমপাড়া থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত নুপুর আক্তার ওই এলাকার জাবেদ আলীর মেয়ে ও তারাকান্দী আলিম মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জানা গেছে, সকালে নুপুর ঘুম থেকে না উঠায় বাবা জাবেদ আলী তাকে ডাক দেন। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরে ঢুকে ধর্নার সঙ্গে তাকে রশিতে ঝুলতে দেখেন। পরে স্থানীয়রা এসে পুলিশে ফোন করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। মেলান্দহ থানার ওসি রাজু আহাম্মদ জানান, এ ঘটনায় একটি অপমৃতু্য মামলা রুজু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।