শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

নালিতাবাড়ীতে ২০ বছর ধরে জাল অভিজ্ঞতা সনদে সুপার পদে চাকরি

আমিনুল ইসালাম, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
নালিতাবাড়ীতে ২০ বছর ধরে জাল অভিজ্ঞতা সনদে সুপার পদে চাকরি

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ২০ বছর ধরে জাল অভিজ্ঞতা সনদে এমপিওভুক্ত দক্ষিণ রানীগাঁও ছিরু মিয়া আজিমদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে চাকরি করে আসছেন এবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় উলেস্নখ, দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট পদে নিয়োগ লাভের জন্য প্রয়োজন কোনো দাখিল মাদ্রাসায় কমপক্ষে ১০ বছরের শিক্ষকতা বা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে আলতাফ হোসেনের এবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এবতেদায়ি প্রধান শিক্ষক থাকাকালে বেতন-ভাতার ০৪৭৬৩৯নং ইনডেক্সটি বর্তমানে সুপার পদে বেতন-ভাতার একই ইনডেক্স।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আখতারুজ্জামান ২০০৮ সালের ১৬ ফেব্রম্নয়ারি নালিতাবাড়ী উপজেলাধীন দক্ষিণ রানীগাঁও ছিরুমিয়া আজিমদ্দিন দাখিল মাদ্রাসাটি সরেজমিন তদন্ত করেন। শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের স্মারক নং-৪৭৪। ২৪/৬/২০০৮ইং তারিখের তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উলেস্নখ করেছেন আলতাফ হোসেন এবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি দাখিল শাখার শিক্ষক ছিলেন না। এবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষকের অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু তিনি দাখিল শাখার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সুপার পদে চাকরি করছেন। দাখিল শাখায় শিক্ষকতার কোনো অভিজ্ঞতা নেই আলতাফ হোসেনের মর্মে তদন্ত প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছেন তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার আখতারুজ্জামান। মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।

অন্যদিকে আরেকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক এসএম মুনজুরুল হক ২০০৯ সালে ৭ ও ৮ জানুয়ারি দক্ষিণ রানীগাঁও ছিরুমিয়া আজিমদ্দিন দাখিল মাদ্রাসাটি সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উলেস্নখ রয়েছে সুপার শূন্য পদে ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর প্রথম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আলতাফ হোসেনসহ তিনজন আবেদন করেন। তাদের বিষয়ে ওই সালের ৭ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনা শেষে তিনটি আবেদন পত্রই বাতিল হয়। পরের বছর ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারির সভার রেজুলেশনে উলেস্নখ আছে- মৌলভী গোলাম হোসেন আপত্তি জানান আলতাফ হোসেনের ২০০৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বাতিল আবেদনটি পরবর্তী বাছাই কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য রাখেন। কিন্তু ওই তারিখের ২নং সিদ্ধান্তে আলতাফ হোসেনের আবেদনটি বাতিল লেখা হয়।

একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নতুনভাবে সুপার পদে আজগর আলীসহ দাখিলকৃত ৪টি আবেদনের সঙ্গে আলতাফ হোসেনের আগের বাতিল হওয়া আবেদনপত্রটি গ্রহণ করা হয়। আগে থেকে এবতেদায়ি প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আলতাফ হোসেন সুপার পদে প্রথম নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল সুপার পদে আলতাফ হোসেন যোগদান করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উলেস্নখ রয়েছে, ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবরের নীতিমালা অনুযায়ী দাখিল মাদ্রাসায় সুপার পদে নিয়োগ লাভের জন্য দাখিল মাদ্রাসায় ১০ বছরের শিক্ষকতা-প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। সুপার আলতাফ হোসেনের ওই মাদ্রাসায় এবতেদায়ি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯৮৪ সালের ১১ জুলাই থেকে ২০০৪ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার সুপার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই। এই মর্মে তৎকালীন সুপার পদের জন্য অন্যতম আবেদনকারী আজগর আলী সিনিয়র সহকারী জজ আদালত নালিতাবাড়ী শেরপুরে মামলা করেছিলেন, যার নং- ১২৭/০৬। আদালতে মামলা থাকায় তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না উলেস্নখ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাদী আজগর আলী মামলাটি পরিচালনা ও তদারকি না করায় খারিজ হয়ে যায়। জাল অভিজ্ঞতা সনদে সুপার পদে নিয়োগকৃত আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দাপ্তরিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা নেই বলে দাবি সচেতন মহলের।

এ ব্যাপারে সুপার আলতাফ হোসেন জানান, '২০০৪ সালে সুপার পদে যোগদান করি। সুপার পদে যোগদানের আগে এবতেদায়ি শাখাপ্রধান শিক্ষক ছিলাম। এবতেদায়ি প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল মনে নেই। সুপার পদে ২৯ হাজার টাকা স্কেল বেতন উত্তোলন করছি ৩৮ হাজার ৪শ' টাকা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে