প্রতি একশ' পিস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা

বাজারে এসেছে কালীপুরের রসালো লিচু

প্রকাশ | ১১ মে ২০২৪, ০০:০০

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)
বাঁশখালী উপজেলার কালীপুরের কালীপুর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনের সড়কের বিক্রি হচ্ছে লিচু -যাযাদি
লিচুর রাজ্য হিসেবে দেশজুড়েই নাম-ডাক রয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর। আর যার জন্যই নাম-ডাক সেই লিচুকে কালীপুরের লিচু বলে। মে মাসের শুরুর দিক থেকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় এই রসালো লিচু। শুধুমাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়িত্ব হয় এই লিচুর বাজার। মূলত মে মাস ঘিরেই চলে চট্টগ্রামের বিখ্যাত কালীপুরের লিচু উৎসব। সরেজমিন, উপজেলার কালীপুরের বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, 'বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল রঙের লিচু। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লিচু ধরেছে বেশ। তাতে উঁচুনিচু পাহাড়ের সারিতে লাগানো ঝুপড়ি গাছের শাখা-প্রশাখায় লিচু আর লিচু। শুধু কি বাণিজ্যিকভাবেই না সড়কের পাশে, বাড়ির উঠানে ও লোকালয়ে সব জায়গায় দুই-একটা করে লিচু গাছ রয়েছে। প্রতি বাড়িতেই লিচু গাছ থাকা যেন এই এলাকার ঐতিহ্য। এ ছাড়াও এসব বড়-ছোট লিচু বাগানের পাশেই চলছে লিচু উৎসব। অপর দিকে কালীপুর রেজিস্ট্রি অফিসস্থ প্রধান সড়কের দুই পাশে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই লিচু বিক্রি করছেন। সড়কে প্রায় যানবাহন দাঁড়িয়ে তাদের থেকে সেই লিচু কিনছেন। খুচরা ও পাইকারি দামে যার যেমন ইচ্ছা বেচাকেনা করছেন। আবার পাশের স্কুলের মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে পাইকারি দরে লিচুর বেচাকেনা চলছিল। তাতে সারি সারি লিচু ভর্তি বাঁশের ঝুড়ি। আর সেই বাঁশের ঝুড়িতে সবুজ পাতার বিছানা। ওই ঝুড়িতে থাকা লাল ও সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে সবার। তাতে ভালো মানের লিচু পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়। অপর দিকে খুচরা বাজারে আকার অনুসারে একেকটি লিচু এক থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হওয়ায় এ বছর লিচুর উৎপাদন হয়েছে বরাবরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। এতে লিচুর বাম্পার ফলন হলেও দামের কমতি নেই। ব্যাপক চাহিদা থাকায় লিচুর আকার ভেদে প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আরও ভালো মানের লিচু বিক্রি হচ্ছে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকায়। তবে প্রথম দিকে দাম বেশি থাকলেও তা ধীরে ধীরে কমে আসবে। কালীপুরের লিচু চাষি মোহাম্মদ হারুন বলেন, 'রাস্তার কাছে বাগানের চেয়ে পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলোতে ফলন বেশি হয়। গাছ থেকে লিচু ছেঁড়ার আগে পর্যন্ত বাগানের পরিচর্যা করতে হয়। প্রকৃতি অনুকূলে না থাকলে লিচুর ফলন কমে যায়। কালীপুরের লিচু সারাদেশেই যায়। আগেভাগে বাজারে আসার কারণে এই লিচুতে বেশি লাভবান হন ব্যবসায়ীরা।' লিচুর পাইকার ব্যবসায়ী রহমত উলস্নাহ বলেন, 'এ বছর এক কানি পরিমাণ লিচু বাগান ৫৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। বাগানে ৩০-৪০টা গাছ আছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে উপযুক্ত দাম পেলে আশা করছি বাগান থেকে লিচু বিক্রি করে ৮০-৯০ হাজার টাকা আয় করতে পারব।' উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, 'চলতি বছরে ৬৩০ হেক্টর লিচু চাষ হয়েছে বাঁশখালীতে। সব জায়গায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে অতিরিক্ত গরমে কিছু বাগানের লিচু ফেটে গেছে। এবার স্থানীয় জাত ছাড়াও উন্নত জাতের চার ধরনের লিচু চাষ হয়েছে, এর মধ্যে রাজশাহীর বোম্বে, বারি ১, ২, ৩ ও ৪ এবং চায়না৩ জাতের লিচু রয়েছে। কালীপুর ছাড়াও আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর লিচু চাষ করা হয়েছে। সব জায়গায় লিচু আর লিচু। চলতি সপ্তাহে কালীপুরের লিচু পুরোপুরি বাজারে এসেছে। কালীপুরের লিচুর স্বাদ বেশি হওয়ায় চাহিদা বেশি, এতে চড়া দাম পাচ্ছেন চাষিরা।' উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, 'কালীপুরের লিচু রসাল ও টসটসে। ভারী মিষ্টি ও সুস্বাদু। বাজারে এর চাহিদাও ভালো। এবার লিচুর বাম্পান ফলন হয়েছে।' চাষিরা এবার লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।