বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী বুধবার উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কবির স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর কাছারি বাড়িতে তিন দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বুধবার সকালে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ী মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৬ সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য জান্নাতা আরা তালুকদার হেনরী, শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান।
তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য, কবিতালেখ্য, গীতিনৃত্য, নাটক ও আলোচনা সভা। শাহজাদপুর, উলস্নাপাড়া ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। প্রবন্ধ আলোচনায় অংশ নেবেন দেশের বরেণ্য কবি সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা। কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শাহজাদপুর কাছারিবাড়িটি বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। এ আয়োজনকে ঘিরে কাছারি বাড়ী অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠেছে ভক্ত ও অনুরাগীদের পদচারণায়। অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্যর্ যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উলেস্নখ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত পিতামহের জমিদারি দেখাশোনা করতে নিয়মিত শাহজাদপুর আসতেন এবং সাময়িক বসবাস করতেন। কাছারিবাড়ীর দোতলা ভবনে বসেই কবি গুরু রচনা করেন বিখ্যাত গ্রন্থ: সোনার তরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুইপাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, হৃদয়, যমুনা, চিত্রা, চৈতালীর ২৮টি কবিতা। রচনা করেন ছিন্নপত্রাবলীর ৩৮টি পত্র। পোস্টমাস্টার, ছুটি, সমাপ্তি, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথির মতো ছোটগল্প, বিসর্জন নাটক ও অজস্র বিখ্যাত গান। কাছারি বাড়ি জাদুঘরে কবির ব্যবহৃত থালা বাসন, খাট,পালকিসহ নানা সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে।
রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেছেন, 'আমাদের বাঙালিদের গর্ব যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেছেন, যে ভাষায় সঙ্গীত রচনা করেছেন- তা আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমাদের এ ভারতীয় উপমহাদেশে আর কোন ভাষায় এরকম কবি বা সাহিত্যিক পাওয়া যাবে না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একসঙ্গে বিশ্বের তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা।'
বুধবার খুলনার রূপসায় কবি গুরু রবীঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উদ্বোধন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠাভোগ রবীন্দ্র সংগ্রহশালায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষের পাশাপাশি সিংহলের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতাও তিনি। শ্রীলঙ্কার খ্যাতিমান সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব আনন্দ সামারাকুন ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও সঙ্গীত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য পান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ছাত্র আনন্দ সামারাকুনের জন্য বাংলা ভাষায় নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা গানটি রচনা করেন এবং এর সুর দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ইউসুব আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আতিকুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দীন বাদশা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার সরদার মাহাবুবার রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল, মোলস্না ওয়াহিদুজ্জামান মিজান। মুখ্য আলোচক ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর দুলাল। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনও কোহিনুর জাহান।
উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আফরোজ মনা, মৎস্য কর্মকর্তা বাপী কুমার দাস, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার মজুমদার, উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, সমাজসেবা কর্মকর্তা জেসিয়া জামান, পিআইও আনিচুর রহমান, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হাসি রাণী রায়, অধ্যাপক মনিসংকর নাগ, রূপসা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আ. রাজ্জাক শেখসহ অনেকেই।
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার বিকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পতিসরে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানার সভাপতিত্বে সাংবাদিক ইমরুল কায়েসের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আত্রাই ইউএনও সঞ্চিতা বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক সুমন, নওগাঁ-৩ আসনের সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী এমপি, নওগাঁ-৪ আসনের এসএম ব্রহানী সুলতান মাহমুদ গামা এমপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া আক্তার, নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (অব.) প্রফেসর শরীফুল ইসলাম খান প্রমুখ।