গ্রীষ্মে প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া
প্রকাশ | ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
প্রকৃতিতে এক নতুন রূপ এনে দেয় কৃষ্ণচূড়া ফুল। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও আপন নিয়মে কৃষ্ণচূড়ার শাখা-প্রশাখা সেজেছে রক্তিম সাজে। কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে আকাশ। মাগুরার মহম্মদপুর, মাদারীপুরের শিবচর, নড়াইলের লোহাগড়া, কুমিলস্নার তিতাস ও বরিশালের উজিরপুরসহ দেশের পথে-প্রান্তরে এখন শুধু কৃষ্ণচূড়ার রাজত্ব। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, তীব্র গরমে নাজেহাল জনজীবন। কোথায় গেলে দুদন্ড শান্তি মিলবে, সেই খোঁজ করে চলেছেন সবাই। ফ্রিজের ঠান্ডা পানিতে গলা ভিজিয়ে আর এসির হাওয়া গায়ে লাগিয়ে খানিকটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে বটে, তবে গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে চোখ জুড়ানো আর মন ভরানো স্বস্তি মিলছে পথের কিনারে ফুটে থাকা লাল-হলুদ ফুলে। কাঠফাটা রৌদ্রের তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করেই বসন্তের রক্তিম রেশ ধরে রেখেছে গ্রীষ্মের চোখ ধাঁধানো লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া।
গাছে-গাছে বর্ণিল সব ফুলের সমারোহ। কোথাও টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া, কোথাও কমলা রঙের রাধাচূড়া। কোথাও আবার ছেয়ে আছে স্নিগ্ধ বেগুনি রঙের জারুল। পথ চলতে থমকে দাঁড়িয়ে এসব ফুলের দিকে কিছুক্ষণ চাননি, এমন মানুষ পাওয়া ভার হবে নিশ্চয়ই। আর মিষ্টি হলুদ রঙের সোনাঝরা সোনালুর ঝলমলে চাহনি গ্রীষ্মের রূপে যোগ করেছে দ্বিগুণ মাত্রা।
সারা দেশের মতো শিবচরে পথে-প্রান্তরে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি। তাই প্রকৃতিতে যেন এখন কৃষ্ণচূড়ার সুদিন বইছে। এ সুদিনের সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতি প্রেমি মানুষের হৃদয়।
সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গ্রীষ্মকাল। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উন্মাদনা, তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব।
রোববার দুপুরে শিবচর-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে, পাঁচ্চর-শিবচর সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলেছে কৃষ্ণচূড়ার। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যের ছবি তুলছেন অনেকেই। কেউ আবার অনেক গাছ থেকে একমুঠো ফুল বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজ শিক্ষার্থী নুপুর আক্তার মারিয়া একজন ফুলপ্রেমী মানুষ। যায়যায়দিনকে তিনি জানান, যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে তখন গাছ-গাছালি লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে অন্যরকম ভালো লাগে। এ ভালো লাগার কথা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না।
আরেক কলেজ শিক্ষার্থী তাসনোভা তুশিনও কৃষ্ণচূড়ার প্রেমি। তিনি বলেন, প্রতিবছর নয়, প্রতিটি দিনই যেন অপেক্ষা গ্রীষ্মের এই দিনগুলোর জন্য। কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন এক অপূর্ব সুন্দরে সেজেছে। প্রতিদিন এ দৃশ্য না দেখলে মনে হয় জীবনটাই বৃথা।
কবি তামিম ইসমাইল বলেন, 'আমি কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়াকে প্রচন্ড ভালোবাসি। আমি তাকে নিয়ে বই লিখি। গ্রীষ্মের এই খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো। রক্তিম লালে প্রকৃতিকে ও যেন অনেক অপরূপ দেখায়।'
সহকারী শিক্ষক লিটন খান বলেন, বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিবচর থেকে রঙিন এই গাছ। একসময় এ গাছ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশি করে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীদের।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'দেশ'র সভাপতি ওয়াহীদুজ্জামান জানান, গ্রীষ্মকালে যখন কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে, তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে গিয়ে তাকাতে বাধ্য হয়। কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়ে থাকে লাল, হলুদ ও সাদা। আমাদের দেশে লাল ও হলুদ বর্ণের কৃষ্ণচূড়া ফুল সচরাচর চোখে পড়ে। এ গাছগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বৃক্ষপ্রেমীদের প্রতি ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি করে এ কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাতে হবে।
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি জানান, কাঠফাটা রৌদ্রের তীব্রতর তাপদাহ উপেক্ষা করেই কৃষ্ণচূড়া তার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে হাজির হয়েছে! গ্রীষ্মের এই রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। লাল আবির মাখা প্রেমের চিরন্তন আবেশ নিয়ে হাজির কৃষ্ণচূড়া। যে দিকে চোখ যায় সবুজের মধ্যে শুধু লাল রঙের মূর্ছনা। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙের সাজ দেখে দু'চোখ জুড়িয়ে যায় প্রকৃতিপ্রেমীদের। চোখে নেমে আশে প্রশান্তি। এ যেন প্রকৃতিজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার মন জুড়িয়ে দেওয়া।
এ সময়টায় সারাদেশের মতোই নড়াইলের লোহাগড়ার পথে-প্রান্তরে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য।
কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর, তা কম লোকই জানেন। কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মিটার হলেও শাখা-পলস্নাবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় আট সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটে।
লক্ষ্ণীপাশা সঙ্গীত একাডেমির সভাপতি, কবি বিএম লিয়াকত হোসেন বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন, শহরায়নের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রকৃতি থেকে কৃষ্ণচূড়া গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃষ্ণচূড়ার গাছ রোপণে সবাইকেই আন্তরিক হতে হবে।
তিতাস (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, কুমিলস্নার তিতাস উপজেলার গ্রামীণ জনপদে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুলের সমারোহ বর্ণময় করে তুলেছে চারপাশ। টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ ফুল এবং উজ্জ্বল সবুজ পাতা দিয়ে নতুন রূপে প্রকৃতির অপরূপ রঙে সেজেছে কৃষ্ণচূড়া গাছের আশপাশের এলাকা।
গৌরীপুর-হোমনা সড়কের মৌটুপী বাস স্টেশন, উপজেলা পরিষদের চত্বর, গাজীপুর খান সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের চোখ ঝলসানো কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো এ পথে যাতায়াতকারীদের নজর কাড়ে। গাছে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, যেন আগুন ধরে গেছে। কড়া লাল বর্ণের ফুলভর্তি গাছটিতে পাতার দেখা মেলা ভার। শুধু এখানে নয়; এ পথের দুই পাশের দূর-দূরান্তের গ্রামগুলোতে তাকালে চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার রাজত্ব।
বলরামপুর ইউনিয়নের কালাইগোবিন্দপুর বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, প্রচন্ড গরমেও কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে শীতল ছায়া অনুভূত হয়। তাই অনেকে ক্লান্ত শরীরে শান্তির পরশ খুঁজে পায়।
জানা যায়, শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙ উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্তকালে এ ফুল ফোটে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০টি উপপত্রবিশিষ্ট।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুলস্নাহ মুস্তাফিন বলেন, প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধক এই কৃষ্ণচূড়া গাছ রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যান্ত্রিক আর ব্যস্ততার ভিড়ে এক সময় খর্ব হবে প্রকৃতির সৌন্দর্যের ভারসাম্য।
উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি জানান, উজিরপুরেও বৈশাখের আকাশে গনগনে সূর্য, কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস, ওষ্ঠাগত প্রাণ, মজুরের করুন চাহনিতে ক্লান্তির ছাপ, প্রকৃতি যখন প্রখর রোদে পুড়ছে তখন গ্রীষ্মের এই নিষ্প্রাণ রুক্ষতাকে ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। প্রকৃতি যেন ক্লান্তি ভুলাতে লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে, দেখলে যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা।
সারা দেশের ন্যায় উজিরপুরের বিভিন্ন স্থানে এই সময়ে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে।
জানা গেছে- ক্যারাবিয়ান অঞ্চল আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে কৃষ্ণচূড়া জন্মে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা এবং টেক্সাসের রিও ডি গ্রান্ড উপত্যকায় কৃষ্ণচূড়া পাওয়া যায়।
শোভা বর্ধনকারী এই বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরুত্ব বহন করে। শখের বসে এই গাছের কদর থাকলেও এর কাঠ ভালো কোনো ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ রোপণে আগ্রহ কম। বৃক্ষ নিধনের শিকার হয়ে আমাদের এলাকায় দিনে দিনে কমে যাচ্ছে রঙিন এই গাছ। পরিবেশবাদীদের ধারণা আস্তে আস্তে এই গাছ বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতি ও সৌন্দর্য রক্ষায় বেশি করে এই গাছ রোপণের আহ্বান সবার প্রতি।
হাওড়াঞ্চল (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গ্রীষ্মের সৌন্দর্য মানে কৃষ্ণচূড়া ফুল। ঋতুবৈচিত্র্যের ধারায় প্রকৃতিতে এখন বিরাজমান বৈশাখ। বৈশাখের প্রখর রোদ যখন তাপপ্রবাহ ছড়ায় তখন কৃষ্ণচূড়া ফুল তার সৌন্দর্যের বার্তা ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতির বুকে। গ্রীষ্মের ঘাম ঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়া ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, এক অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করে থাকে এ সৌন্দর্য।
এমনই দৃশ্য চোখে পড়ছে কিশোরগঞ্জের হাওড়অধু্যষিত উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। কৃষ্ণচূড়ার মনকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করছে কিশোরগঞ্জের হাওড়অধু্যষিত উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। সবুজ চিকন পাতা, ফাঁকে লাল লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। দেখলেই চোখ এবং প্রাণজুড়িয়ে যায়। কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে যেন এক অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন শোভা। এপ্রিলে গ্রীষ্মের শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতির সবুজ পেছনে ফেলে বেরিয়ে আসতে থাকে লাল রঙের এ কৃষ্ণচূড়া ফুল। মানুষের দৃষ্টিগোচর হতে থাকে তার সৌন্দর্য। তখন আর আলাদা করে তার খোঁজ নেওয়ার দরকার হয় না। প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে রঙিন করে তুলেছে।
এ সময়টাতে সারাদেশের মতো কিশোরগঞ্জের হাওড়অধু্যষিত অষ্টগ্রাম, ইটনা মিঠামইন বাজিতপুর, নিকলীসহ হাওড়ের পথজুড়ে যেন কৃষ্ণচূড়ার রঙমশাল। এর মধ্যে জেলার সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যে ভিড় করছেন ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের দিকে। আরেকটি হলো অষ্টগ্রাম রোটারি সরকারি কলেজে দিকে। ভাগলপুরে সড়কের দুপাশে বেশ কিছু কৃষ্ণচূড়া গাছ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই মনোরম দৃশ্য চোখে দেখতে প্রতিদিন বিকালে শতশত লোকজন সেখানে যাচ্ছেন।
অষ্টগ্রাম রোটারি সরকারি কলেেেজর অধ্যক্ষ মোজতাবা আরিফ খান বলেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল এই গরমে প্রকৃতিকে ভিন্ন সাজে সাজিয়েছে। এর রূপ সব শ্রেণির, সব বয়সের মানুষকে মুগ্ধ করে। সবুজের মধ্যে রক্তাক্ত লাল ফুল মন ভালো করে দেয়। হাওড়ের পথে-প্রান্তরে এবার অসংখ্য কৃষ্ণচূড়াগাছে ফুল এসেছে। কড়া রোদে অথবা বৃষ্টির পর রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে এ ফুল আরও রূপ মেলে ধরে।
অষ্টগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উবায়দুর রহমান সাহেল বলেন, প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক হলো এ কৃষ্ণচূড়া গাছ। গ্রীষ্ম এলেই যেন প্রকৃতির ভালোবাসার কথা জানান দিতে হেসে ওঠে এ কৃষ্ণচূড়া। আমাদের বাংগালপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সামনে একটি কৃষ্ণ চূড়া গাছ রয়েছে বর্তমানে দেখলে মনে হয় চোখ ধাঁধানো কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য যেন হার মানায় ঋতুরাজকেও।