অবৈধ ভাটার ছড়াছড়িতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ
মৌলভীবাজারে যত্রতত্র ভাটায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি
প্রকাশ | ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০
মো. আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে মোট ৬৩টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে কিছু সংখ্যক ভাটার মালিক পরিবেশের নিয়ম-কানুন না মেনে যত্রতত্র পরিচালনা করে দিন দিন ধ্বংস করে দিচ্ছেন। এসব ইটভাটার কারণে জেলার ২ হাজার ৭৯৯ বর্গকিলোমিটার এলাকার জীববৈচিত্র্যের মসৃণ পরিবেশ হুমকিতে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশসহ পুরোপৃথিবীর মানুষ যখন নাজেহাল, ঠিক তখনই ওই ভাটায় নিয়মনীতি না মেনে যত্রতত্র পরিবেশ তৈরি করায় নতুন করে বায়ুদূষণ যুক্ত হচ্ছে। এই দূষণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন জেলার ২১ লাখ ২২ হাজার ৭০৩ জন মানুষ। খবর রয়েছে, কেউ কেউ বৃক্ষ খেকোদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বন থেকে গাছ এনে কয়লার পরিবর্তে বৃক্ষ জ্বালিয়ে ভাটা পরিচালনা করছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত ৭টি ভাটাকে অবৈধ তালিকায় রেখেছে খোদ পরিবেশ অধিদপ্তর।
অনুসন্ধানে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলার ৭ উপজেলা জুড়ে মোট ৬৩টি ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশের নিয়ম-কানুন মেনেছে এমন বৈধ ভাটা রয়েছে ৫৬টি। নিয়ম কানুন না মানা এমন ৭টি ভাটা অবৈধ তালিকায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার এই হিসেব দিয়েছেন। কার্যালয়টি জানায়, দুই ধরনের ভাটার মধ্যে 'অটো ইট ভাটা'র স্কুল-মাদ্রাসা থেকে দূরত্ব ৪শ' মিটার ও 'হাওয়া ইট ভাটা' শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। এগুলো না মানার কারণে ৭টি ভাটাকে নিবন্ধিত করা হয়নি। এগুলোর মধ্যে অনেকে গায়ের জোড়ে ভাটা পরিচালনা করছেন বলেও জানা গেছে। মালিকদের মধ্যে কেউ ছাড়পত্রবিহীন, কেউ রিট পিটিশন আবার কেউ নবায়ন ছাড়া পরিচালনা করে আসছেন। ৭টি অবৈধ ইট-ভাটার মধ্যে কমলগঞ্জে একটি ভাটা ৪-৫ বছর ধরে বন্ধ ছিল। পরিবেশের নীতিমালা না মেনেই ফের চালু হয়েছে ভাটাটি। এদিকে আদালতের রিট পিটিশন দিয়ে চালানো একই উপজেলার আরেকটি ভাটা রিট পিটিশন দিয়ে চালানো ও ছাড়পত্রবিহীন একই উপজেলার মুন্সিবাজার'র পাবলিত কোনা-বৃন্দাবনপুর এলাকার ভাটা, রিটপিটিশন দিয়ে চালানো বড়লেখা উপজেলার সুজানগর'র ভোলারকান্দি এলাকার একটি, কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণবাজার এলাকার একটি, জুড়ী উপজেলার উত্তর ভবানিপুর এলাকায় মাত্র ১২০ ফুট চিমনি দিয়ে ভাটা চালানো আরেকটি ও আদালতের রিট পিটিশন দিয়ে চালানো মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বারোহাল এলাকায় অবস্থিত একটি ভাটা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন'র (বাপা) জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন, ইটভাটার কারণে প্রতিনিয়ত জমি থেকে মাটি উত্তোলন করায় দিন দিন ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ভাটা বন্ধ করা উচিত। মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দুল ইসলাম জানান, জেলায় ৬৩টি ভাটার মধ্যে ৩টি ভাটা বর্তমানে অবধৈ তালিকায় রয়েছে ও ৪টি অবৈধ ভাটা বন্ধ রয়েছে। 'সাবারি ব্রিক্স, মহসীন ব্রিক্স ও এসকে ব্রিক্স আমাদের তালিকায় এখন পর্যন্ত অবৈধ।'
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অবৈধ ভাটার মালিকরা আদালতে রিট পিটিশন করে পরিচালনা করছেন। কমলগঞ্জের সাবারি ব্রিক্স ৪/৫ বছর যাবৎ বন্ধ ছিল। ফের তিনি অবৈধ পন্থায় ভাটা চালু করেছেন। উনার ভাটার লাইসেন্স ও ছাড়পত্র কোনটাই।'