বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

তারাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ারের অনিয়মের সিন্ডিকেট

তারাকান্দা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
তারাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ারের অনিয়মের সিন্ডিকেট

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) দুইজন উপসহকারী প্রকৌশল থাকলেও অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের সুপারভিশন অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সার্ভেয়ার (জরিপকারী) কে। ফলে কাজের মান যথাযথ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে অফিস স্টাফ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মহলে চলছে গুঞ্জন। সে সঙ্গে চলমান কাজের গুণগত মান নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

নিয়ম অনুযায়ী, উপজেলায় এলজিইডির অধীন যেসব কাজ হয় উপজেলা প্রকৌশলী সার্বিকভাবে সেগুলোর দায়িত্বে থাকেন। তিনি ঠিক করে দেন উপসহকারী প্রকৌশলীরা কে কোন কাজ দেখবেন। দায়িত্ব অনুযায়ী উপসহকারী প্রকৌশলীরা সরাসরি সেসব কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন ও কাজ তদারকি করবেন। কাজ শেষ হলে তারাই বিল করবেন। আর জরিপকারীর দায়িত্ব হলো কাজের আগে জরিপ করা। কিন্তু তারাকান্দা উপজেলা এলজিইডিতে চলছে উল্টোটা। সার্ভেয়ার (জরিপকারী) কাজের মান দেখভাল করছেন। আর উপসহকারী প্রকৌশলীরা অবসর সময় কাটাচ্ছেন।

একাধিক উপ সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্ত্বেও সার্ভেয়ারকে সুপারভিশন অফিসার করার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, তারাকান্দা এলজিইডি অফিস চলছে উপজেলা প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন ও সার্ভেয়ার রুকনুজ্জামান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।

এলজিইডি তারাকান্দা স্কিম তথ্যবোর্ডে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন সহকারী প্রকৌশলী জুবায়ের হোসেন। উপসহকারী প্রকৌশলী দুইজন মো. শওকত আলী খান ও মো. মাকসুদ উল ইসলাম এবং সার্ভেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. রুকনুজ্জামান।

জানা যায়, ফুলপুর- তারাকান্দা থেকে বারবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তারাকান্দা উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। তারাকান্দা এলজিইডির মাধ্যমে চলতি ও গত অর্থ বছরের প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকার কাজ একাই তদারকি করছেন সার্ভেয়ার রুকনুজ্জামান।

উপজেলা প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন স্বাক্ষরিত কাগজে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে কাশিগঞ্জ বাজার-অম্বিকাগঞ্জ ৮৮৮৬মিটার সড়ক মেরামত, তারাকান্দা-গোয়াতলা সড়কে প্রায় তিনি কোটি টাকা ব্যয়ে আরসিসি গাডার ব্রীজ, প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে চংনাপাড়া আরসিসি গাডার ব্রীজ, দিস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত ভবন নির্মান, আমিনা একাডেমি অতিরিক্ত ভবন নির্মাণ, দাদরা থেকে ঢাকিরকান্দা সড়ক, কাকনি ইউপি থেকে পারুলিতলা বাজার, তারাকান্দা জিসি-বালিখা ইউপি ভায়া মাসকান্দা সড়ক, তারাকান্দা ভাইটকান্দি সড়ক, দাদরা চৌরাস্তা বাজার-বালিখা ইউপি সড়ক, মাসকান্দা-রাউতনবাড়ি সড়ক, পায়ারী-দাদরা বাজার (তারাকান্দা অংশ) সড়ক, মাসকান্দা- ছাইতানতলা সড়ক, তালদিঘি-বগিরপাড়া সড়ক, কাকনি-রুপসী বাজার ও পাতিলগাও বাজার (তারাকান্দা অংশ) সড়ক, কাকনি বাসস্ট্যান্ড- কাজীর দোকান সড়ক, তালদিঘি-পুঙ্গাই সড়ক, মাইলোরা বাজার- কানুয়ারী আরব আলী মিস্ত্রি বাজার ভায়া খন্দলবাড়ী সড়ক ও নিমতলা বাজার-রাংসা নদী সড়ক সহ আরও বেশ কয়েকটি কাজের সুপারভিশন অফিসার সার্ভেয়ার রুকনুজ্জামান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জরিপকারীকে দিয়ে তদারকি করানোয় উপসহকারী প্রকৌশলীরা কাজ করার আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।

উপ সহকারী প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে সার্ভেয়ারদের সুপারভিশন অফিসার নিয়োগ এক ধরনের অনিয়ম দাবি করে এলজিইডি ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সারোয়ার জাহান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে দশম গ্রেডের নিচে কোন কর্মকর্তার বিল প্রদানের সুযোগ নেই। এলজিইডিতে সার্ভেয়ার (জরিপকারী) পদটি ১৬তম গ্রেডের। সে ক্ষেত্রে ১৬ গ্রেডের কর্মচারীরা বিল দিচ্ছে যা ভাবাই যায় না। এটি নিয়মের ব্যত্যয়।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী (রনু ঠাকুর) বলেন, 'আমাদের এমপির চেষ্টায় উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকলে কাজের মান বজায় থাকবে না। আর যার যে কাজ তার সেই দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি।'

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন রাজি হননি। এ বিষয়ে এলজিইডি ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত কবীর বলেন, ময়মনসিংহ অফিস থেকে লোক পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলজিইডির ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোলাম কবীর বলেন, 'আগে খোঁজ নিয়ে দেখি তারাকান্দা উপজেলায় কী হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে