বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১
ধানের বাম্পার ফলনে মাজরা পোকার আক্রমণ

অভয়নগরে ম্স্নান ৭২ কৃষক পরিবারের স্বপ্ন

দুপচঁাঁচিয়ায় ইরি বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু ফলনে খুশি চাষি
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
অভয়নগরে ম্স্নান ৭২ কৃষক পরিবারের স্বপ্ন

যশোরের অভয়নগরে ১৫০ বিঘা জমিতে 'তেজ গোল্ড' নামে ধানের বীজ লাগিয়ে প্রচুর ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু পাকা ধান কাটার আগেই কৃষকের স্বপ্ন ম্স্নান করেছে 'মাজরা' নামে এক পোকা। পোকার আক্রমণে ধূসর হয়ে গেছে পাকা ধানের ক্ষেত। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন অসংখ্য কৃষক। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় (সমলয় চাষাবাদ) কার্যক্রম শুরু করা হয়। শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামে শংকরপাশা বস্নকে ৭২ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা (৫০ একর) জমির জন্য সিডলিং ট্রেতে শুস্ক বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে। পরে রাইস ট্রান্সপস্নান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়। এবং গুটি ইউরিয়া ব্যবহারসহ সুষম মাত্রায় সার দেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, পোকার আক্রমণে ধূসর হয়ে গেছে বিঘার পর বিঘা পাকা ধানের ক্ষেত। ম্স্নান মুখে ধান ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনেক কৃষক। ক্ষেতের পাশে ২০-৩০ জন কৃষককে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিক প্রস্তুত করছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

এসময় কৃষক কামাল মোল্যা, সুবহান শেখ, শহিদুল গাজী, গোলাম রসুল মোড়লসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, সরকারিভাবে তেজ গোল্ড নামে বায়ার ক্রপ সাইন্স কোম্পানির বীজতলা স্থাপন করেন। চলতি বছরের শুরুতে মেশিন দিয়ে চারা রোপণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া সরকারিভাবে সার ছিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ধান পাকতে শুরু করে। সোমবার সকালে কাটতে এসে দেখেন মাজরা পোকার আক্রমণে ধান চিটা হয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আরও বলেন, সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও সেচ, কীটনাশক ও পরিচর্যার জন্য বিঘাপ্রতি তাদের এক-একজনের প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ করে এই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সপ্তাহ শেষে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ না পেলে তাদের চরম ক্ষতি হবে। পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়া হতে হবে।

শ্রীধরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, 'কৃষক পরিবারগুলোর অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দুঃখজনক। বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়া জমি ও ক্ষতির পরিমাণ হিসেবে করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তা দেওয়া জরুরি।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, 'গত ১০-১২ দিন আগে আমি নিজে এই বস্নক পরিদর্শন করেছি। তখন কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি। কৃষকরাও অভিযোগ করেনি। তারা মাজরা পোকার আক্রমণের বিষয়টিও আমাকে বলেনি। সোমবার দুপুরে সরেজমিন দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামীতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে কি কারণে এমনটি হয়েছে তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ বলেন, 'সোমবার সকালে দিয়াপাড়া গ্রামের কৃষকরা আমার অফিসে এসেছিলেন। তাদের অভিযোগ শুনেছি। কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। আমি নিজেও সেখানে যাব।'

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ইরি বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটায় ও পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় ধানের ফলনে খুশি চাষি।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ মৌসুমে ১১ হাজার ৭শ' হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উফশী ১০ হাজার ৯৫০ হেক্টর ও হাইব্রিড ৭৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে একশ' হেক্টর জমির ধান কর্তন করেছেন চাষিরা। আবহাওয়া ভালো থাকায় ইরি বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে ভালো।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইরি বোরো ধানের চারা রোপণের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না ঘটায় ক্ষেতের অবস্থা খুব ভালো হয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে প্রচন্ড খরায় কিছু কিছু জমির পানির সংকট দেখা দিলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে তা কেটে যায়। বর্তমানে তারা ধানের ভালো ফলনের আশা করছেন।

উপজেলার দেবড়াশন গ্রামের বোরো চাষি আব্দুস সালাম জানান, তিনি এবার ১৮ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি কয়েক বিঘা জিরাশাইল ধান কেটেছেন। এতে তিনি বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান পেয়েছেন।

উপজেলার রসূলপুর গ্রামের আরেক চাষি জিলস্নুর রহমান বলেন, তিনি ৭ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছেন। বর্তমানে তিনি ২ বিঘা জিরাশাইল ধান কেটে বিঘাপ্রতি ২১ মণ করে ধান পেয়েছেন। ধানের এ ফলনে তারা খুশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাজেদুল আলম জানান, এ মৌসুমে চারা রোপণের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না থাকায় দুপচাঁচিয়ায় ইরি-বোরো ক্ষেতের অবস্থা ভালো। ধানের উৎপাদনও সন্তোষজনক। এ উপজেলায় আলু ও সরিষা ঘরে তোলার পর বেশকিছু জমিতে দেরিতে ইরি-বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ওইসব জমির ধানের উৎপাদন সন্তোষজনক হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে