নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বেশ কয়েকটিতে নেই স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। জনবল, মান-সম্মত অপারেশন থিয়েটার, চিকিৎসক, নার্স, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জাম না থাকলেও এসব অবৈধভাবে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রসূতি ও তাদের সন্তান সঠিক চিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারান। এরপরেও এসব প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক মৃতু্যর ঘটনাগুলো সুকৌশলে ধামাচাপা দিয়ে আসছেন। মাঝে-মধ্যে এ রকম ঘটনা প্রকাশ পেলেও এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে তাদের এসব কাজ-কারবার নির্বিঘ্নেই চলছে।
প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সমিতির একটি সূত্র মতে, এসব প্রতিষ্ঠান ৫৬টির মতো। তবে অভিযোগ উঠেছে এগুলোর বেশির ভাগই অবৈধভাবে চলে আসছে। গত ৫ এপ্রিল মা ও শিশু হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বুড়ি পুকুরের গোপিনাথপুর কুমারপাড়ার কাজল চন্দ্র রায় তার অন্তঃসত্ত্ব্বা স্ত্রী ডলি রানীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। তার স্ত্রীর বিকালে সিজার করা হয়। রাত ২টার পর রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে ৬ এপ্রিল ভোর ৫টার দিকে মারা যান ডলি রানী। অভিযোগ উঠেছে, তারা গুরুতর অবস্থার নামে রোগীর লোকজনকে ম্যানেজ করে রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানোর আড়ালে তারাগঞ্জ দিয়ে রোগীর বাড়ি বদরগঞ্জ পাঠায়। সেখানে পরের দিন জন্ম নেওয়া সন্তানও মারা যায়। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠানে রোগীর মৃতু্যর ঘটনা ঘটে যা ধামা-চাপা দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে মা ও শিশু হাসপাতালের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে হাসপাতালের ম্যানেজারের মোবাইল নম্বরে (০১৭২২১১০৫৩) কল দিলে রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ রকম মৃতু্যর ঘটনা আরও বেশ কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এর আগে ঘটলেও এসব বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ নেয়নি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ তাদের হাসপাতালে যোগ্য ডাক্তার, নার্স বা রোগ নির্ণয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান নিয়োগ না দেওয়ায় এ রকম দীর্ঘদিন থেকেই ঘটে আসছে।
এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলেমুর বাশার জানান, 'আমার জানা মতে, মা ও শিশু হাসপাতালের এ ঘটনার ব্যাপারে সিভিল সার্জন ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছে এবং রোগীর ওপর ব্যবহৃত ওষুধের স্যাম্পল ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া কেউ এ নিয়ে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ দেননি।'
সৈয়দপুরে কতগুলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন রয়েছে জানতে চাইলে ডা. আলেমুর বাশার জানান, 'এ মুহূর্তে আমার প্রকৃত সংখ্যা মনে পড়ছে না। তবে অনুমোদনপ্রাপ্ত হাসপাতাল ১৫ থেকে ১৭টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২৫ থেকে ২৭টি রয়েছে।'
হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রয়োজনীয় মানসম্মত অপারেশন থিয়েটার, জনবল, চিকিৎসক, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব ব্যাপারে অভিযোগ থাকলে উপযুক্ত প্রমাণসহ সিভিল সার্জনকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার সভাপতি ডা. খায়রুল বাশার জানান, সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চালানো হচ্ছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি করা প্রয়োজন। রোগীদের ভুল চিকিৎসায় মৃতু্যর ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে হবে।