হ্রদ পাড়ের মানুষের বছরের অর্ধেক সময়ই কাটে দুর্ভোগ-দুর্দশায়! বিশেষ করে গ্রীষ্ম বা শুষ্ক মৌসুমে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদনির্ভর মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কাপ্তাই হ্রদের নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সঙ্গে যাত্রী-মালবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগেই। গত ২৭ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন এখানকার যাত্রীরা। এ ছাড়া উপজেলার বাজারগুলোতে পণ্য পরিবহণেও বেড়েছে খরচ। তবে স্পিড বোটে করে নৌপথে যাতায়াত করা গেলেও বেশি ভাড়া ও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার কারণে নৌপথের যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদে যাত্রী-মালবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধের ফলে লংগদুর সঙ্গে জেলা শহরে যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। পানি সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে লংগদুর মানুষ। নিরুপায় হয়ে দীর্ঘসময় ভেঙে ভেঙে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। বিশেষ করে লংগদুর সঙ্গে জেলা সদরের যাতায়াতে লঞ্চ ভাড়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। সেখানে স্পিড বোটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা।
উপজেলার চাইল্যাতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল করিম জানান, উপজেলা সদরের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসতে আগে ঘণ্টাখানেক লাগলেও এখন ৪ ঘণ্টা লাগে। লঞ্চ চলাচলে দুর্ভোগের কারণে স্পিডবোটেই যেতে হয় জেলা সদরে। স্পিডবোটে যাতায়াত করা গেলেও বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হয় অন্য যাত্রীর জন্য। দুর্ভোগের শেষ নেই।
ব্যবসায়ী রহমান জানান, এ উপজেলার সব কাঁচামাল নৌপথে জেলা শহরে যেত লঞ্চ বা বড় বোট দিয়ে। এখন কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় লঞ্চ ও বড় বোট চলতে পারে না, ফলে বেশি টাকা ভাড়া দিতে গিয়ে লাভ থাকে না। এমন চলতে থাকলে লংগদুর কৃষি খাতের অর্থনীতির ধ্বংস নামবে।
সচেতন মহল ও স্থানীয়দের দাবি দ্রম্নত সময়ে এ হ্রদ খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক।
মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নদীটি খনন করে রাঙামাটি সদরের সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করতে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি, আশা করি শিগগিরই একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিংয়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাই হ্রদে পানি আছে ৭৩ দশমিক ৬১ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। যদিও রুল কার্ড অনুযায়ী থাকার কথা ছিল ৮১ দশমিক ৬২ এমএসএল। স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ এমএসএল পানি কম আছে কাপ্তাই হ্রদে। রাঙামাটি জেলা শহরের সঙ্গে লংগদুসহ বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে আরও ৬ মাস আগেই জেলা সদরের সঙ্গে নৌপথে বাঘাইছড়ি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে নাব্য সংকটের কারণে।