শেষ হলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা
প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
রাত পেরোলেই অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ। তাই শেষ হলো প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রচারণা। ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোটকেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ হলো ১১ প্রার্থীর প্রচারণা। রাত পেরোলেই অনুষ্ঠিত হবে ভোট। ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে একজন হচ্ছেন জাতীয় পার্টির আদর্শের। অন্য বাকি ১০ জনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শের। বলতে গেলে নিজেদের সঙ্গেই হবে নিজেদের লড়াই। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ৩ জন চেয়ারম্যান, ৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী।
চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট আশরাফী মেহেদী হাসান দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। হাবিবুর রহমান হাবিব আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম-বিষয়ক সম্পাদক। অপর প্রার্থী আমজাদ হোসেন স্বপন মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
অন্যদিকে ৫ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- নুরুজ্জামান (মাইক), মোজাম্মেল হক (টিয়া পাখি), এমএ সাদ্দাম হোসাইন রুবেল পালোয়ান (উড়োজাহাজ), আবু জাফর মো. শামসুল হক (তালা) ও মো. ফারুক ভূঁইয়া (চশমা)। এদের মধ্যে তালা প্রতীকে আবু জাফর মো. শামসুল হক ছাড়া সবাই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা আওয়ামী পরিবারের সদস্য। ফুটবল প্রতীকের শর্মিলা রোজারিও বর্তমান পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। হাঁস প্রতীকের জুয়েনা আহমেদ কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কলস প্রতীকের শর্মিলী দাস মিলি কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং গাজীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি।
সহকারী রিটার্নিং ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের ৯০ ভোট কেন্দ্রের ৫৪৫টি কক্ষে ৮ মে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, নানা অনুকূল ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে ভোটের মাঠে সরগরম অবস্থায় এমপিপুত্র ও ভাই। এতে বিভিন্ন মহলের নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা পাহাড়সম হলেও এসবে তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো করে নানা ধরনের কৌশল ও মানবতার জাল বিছিয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে রয়েছেন এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। এমপিপুত্র সাখাওয়াত হোসেন সজল ভোট করছেন সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে ও সোনাতলা উপজেলা থেকে ছোটভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন।
বগুড়া ১ সারিয়াকান্দি সোনাতলা আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান শিল্পী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনা মাথায় নিয়েই বিজয়ী হন। ৪ মাস না পেরোতেই মাথায় নেন নতুন চিন্তা। সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করেন পুত্র সজলকে। নিজের পুত্রকে বিজয়ী করতে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আয়ত্তে নিতে শুরু হয় বিভিন্ন কৌশল। এতে অনেকটাই হতাশ সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এবারের নির্বাচনে আনারস প্রতীক প্রার্থী রেজাউল করিম মন্টু।
তবে এমপির ছোটভাই অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটন বোনের ওপর তেমন ভর না করে নিজের মতো করে মাঠ গুছিয়ে ভোটের মাঠে আছেন। তিনি সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান। বিভিন্ন সময় দলের নেতাকর্মীর সঙ্গে নানা ধরনের মন ধরাধরি ও হট্টগোল থাকলেও ভোটের আগে নিজের কৌশলে সব নেতাকর্মীকে আবার আয়ত্তে নিয়ে ভোটের মাঠে টিকে থাকেন।
এদিকে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সজলকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সড়ে দাঁড়ান দুই প্রার্থী। গত শনিবার সারিয়াকান্দি প্রেস ক্লাবে পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান তারা। প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক আহম্মেদ (হেলি কপ্টার প্রতীক) ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম (মোটর সাইকেল প্রতীক)।
৮ মে বগুড়ায় ৩টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলোর মধ্যে সারিয়াকান্দিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তারা হলেন- এমপিপুত্র সাখাওয়াত হোসেন সজল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু ও সাজাহান আলী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন।
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আগামীকাল বুধবার ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রধম ধাপের নির্বাচন। গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়াসহ কোটালীপাড়া ৩টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং প্রচার বন্ধ হয়েছে এবং রাত ১২টায় সব নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নির্বাচনী প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে প্রায়। উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভার মধ্যে ভোট কেন্দ্র হবে ৩১টি এবং ভোট কক্ষ ২৪০টির মধ্যে স্থায়ী ভোট কক্ষ ১৯৩টি এবং অস্থায়ী কক্ষ হবে ৪৭টি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়জুল মোলস্না এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন টুঙ্গিপাড়া নির্বাচন কর্মকর্তা বদরুল আলম।
তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ব্যালট বাক্স আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোট কক্ষ প্রস্তুত। আজ মঙ্গলবার বিকাল নাগাদ ব্যালট পেপার ছাড়া সব নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে যাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে এবং ব্যালট পেপার পৌঁছাবে নির্বাচনের দিন সকাল ৮টার আগে। নির্বাচন সম্পন্ন হবে নিরপেক্ষভাবে। নির্বাচনে প্রার্থী অথবা তাদের সমর্থক কেউ নির্বাচন প্রভাবিত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃংখলা বাহিনী সব সময় সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কুতুবদিয়ায় ৮ মে বুধবার অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চাচা-ভাতিজার লড়াই বেশ জমে উঠেছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে শেষ হাসি চাচা না ভাতিজা হাসবেন এ নিয়ে ছয় ইউনিয়নে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন তারই ভাতিজা ব্যারিস্টার হানিফ বিন কাশেম।
এদিকে, গত ৪ এপ্রিল চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় তাকে ছাড়াই প্রচারণা চালাচ্ছেন সমর্থকরা। এজন্য কিছুটা প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। তবে তার অনুপস্থিতিতেও মাইকিংসহ প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। এবারও তার জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী কর্মী-সমর্থকরা। এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার হানিফ বিন কাশেম চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন- ভোট সুষ্ঠু হলে তার বিজয় ঠেকানো যাবে না।
ভোটারদের ভাষ্য, চাচা-ভাতিজা দুইজন প্রার্থী হওয়ায় তারা কাকে ভোট দেবেন, এ নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। আত্মীয়স্বজনও রয়েছে চিন্তায়। তবে নির্বাচন পর্যন্ত ভোটারদের কাছে চাচা-ভাতিজার নির্বাচনী লড়াই বেশ উপভোগ্য হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৩৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট প্রয়োগ করতে পারবে।