ক্ষতিগ্রস্ত বিদু্যৎ ব্যবস্থা, বসতঘর ও জমির ফসল

আকস্মিক কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
হঠাৎ শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। কৃষকের পাকা ধান ঝরে পড়েছে। ভেঙে গেছে বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বিদু্যতের খুঁটি। নিজ এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কালবৈশাখীতে কমপক্ষে ৪০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে সঞ্চালন লাইনের উপর পড়ায় পলস্নী বিদু্যতের ১০টি খুঁটি ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রান্সফরমার। এতে অন্তত ৬৫ হাজার গ্রাহকের বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গত রোববার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়ন, নাসিরপুর, দাঁতমন্ডল, ধনকুড়া, কুলিকুন্ডা ও মন্নরপুর এলাকার উপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়। জানা গেছে, ঝড়ে প্রায় ৪০টি বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এছাড়া বেশকিছু দোকানপাট ও হাঁস, মুরগির খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা ভেঙে বিদু্যতের তারের ওপর ঝুলে পড়ে। বেশ কিছু শতবর্ষী কৃষ্ণচুড়া গাছের গোড়া উপড়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরে কালবৈশাখীতে সদরে ৯টি, কুলিকুন্ডা গ্রামে ৩টি, দাঁতমন্ডল গ্রামে ১০টি, নাসিরপুর গ্রামে ৫টি, ধনকুড়া গ্রামে ৪টি, মন্নরপুর গ্রামে ৮-১০টি ও বুড়িশ্বর গ্রামে ৩টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পলস্নী বিদু্যৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে বড়ঘাট এলাকায় পলস্নী বিদু্যতের ৩৩ কেভি লাইনের ১০টির মতো খুঁটি ভেঙে বিদু্যতের তার মাটিতে পড়ে গেছে। অনেক গাছ বিদু্যতের তারের ওপর ঝুলে পড়েছে। এতে করে উপজেলার বিদু্যৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে পলস্নী বিদু্যতের লোকজন সড়ক থেকে বিদু্যতের খুঁটি ও তার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ ব্যাপারে নাসিরনগর পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির জোনাল ম্যানেজার প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, রোববারের কালবৈশাখীতে খুঁটি ও মিটারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জেলা অফিসে যোগাযোগের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুঁটি মেরামতের কাজ করছি। নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, রোববার রাতের ঝড়ে প্রায় ৪০টি ঘর, কিছু বৈদু্যতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে। দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় হঠাৎ ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে পাকা ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার কুলস্নাগড়া, দুর্গাপুর সদর, গাওকান্দিয়া, চন্ডিগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ মৌসুমে এমন শিলাবৃষ্টি পড়তে কখনো দেখেননি বলে জানান স্থানীয় কৃষক। জানা যায়, বেশিরভাগ জমির ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে। তবে শ্রমিক বা ধান কাটার মেশিন সংকটে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। গত রাতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ধানের শিষ থেকে বেশিরভাগ ধান ঝরে গেছে। জমির পাকা ধানগুলো ঘরে তোলার আগেই শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে এমন ক্ষতি যেন কৃষকদের মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাছাড়া এই শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফল ও গাছেরও ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। কুড়ালিয়া গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, আমি ১৭ কাঠা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ভাইরাসের জন্য ৭ কাঠা কেটে ফেলি। সেই ৭ কাঠায় ১০ মণ ধান পেয়েছি মাত্র। বাকি ১০ কাঠা জমির পাকা ধান গত রাতে শিলাবৃষ্টিতে ঝরে গেছে। কয়েকদিন ধরেই কাঠার জন্য চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মেশিন পাচ্ছিলাম না।' উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিপা বিশ্বাস বলেন, এ পর্যন্ত ৪৫% জমির ধান কর্তন হয়েছে। তবে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে অফিসের লোকজন মাঠে আছেন। কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কালবৈশাখীতে ভেঙে গেছে হাসিনা-সাহিদ মাধ্যমিক মডেল একাডেমির একটি টিনের ভবন। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের হাসিনা-সাহিদ মাধ্যমিক মডেল একাডেমির একটি টিনের ভবন ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার সকালে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেন ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পিআইও কর্মকর্তা আজিজুর রহমান, গড়াডোবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খান সোহাগসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার জানান, এ ঘরটি পুনঃনির্মাণে ত্রাণের টিন সহায়তা প্রদানে আশ্বস্ত করেছি এবং শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বৈদু্যতিক লাইন, মৌসুমি সবজি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাজারে ও গ্রামে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতি এবং গাছপালা উপড়ে পড়েছে। রোববার সন্ধ্যায় মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। এতে লাখাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তান্ডব চলে। ঝড়ে কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও পলস্নী বিদু্যতের সরবরাহ লাইনের বেশকিছু খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বেশকিছু এলাকায় ছিঁড়ে পড়ে বৈদু্যতিক তার। উপজেলায় বন্ধ থাকা বৈদু্যতিক লাইন দ্রম্নত চালু করতে কাজ করছে লাখাই পলস্নী বিদু্যৎ জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিজিএম আসাদুজ্জামান অনুজ। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপজেলার হাওড়ের এবং মৌসুমি সবজির ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, হাওড় জুড়ে ৯৮ ভাগেরও বেশি ধান কাটা হলেও কাটার জন্য অপেক্ষমাণ জমির ধান গাছ হেলে পড়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান। অনুকূল আবহাওয়া সাপেক্ষে দ্রম্নত অবশিষ্ট ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানান।