বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

মেঘনায় অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে কোটি টাকার বাণিজ্য

হিজলা (বরিশাল) প্রতিনিধি
  ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০
মেঘনায় অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে কোটি টাকার বাণিজ্য

ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে ২ মাস সব ধরনের মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে অসাধু কিছু মৎস্য ব্যবসায়ী, জেলে, সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মাঝিদের যোগসাজশে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শেষ সময়েও চলছে অবাধে মাছ শিকার।

মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে ২০১৯ সালে সরকার দেশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনা ও এর শাখা নদীগুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়। মার্চ-এপ্রিল ২ মাস এই অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ বরিশালের হিজলা উপজেলায় মেঘনাসহ শাখা নদীগুলোতে ছোট নৌকা বা ট্রলার নিয়ে নিয়মিত ইলিশ ও বেড় জাল দিয়ে অন্যান্য মাছ শিকার চলছেই। এসব মাছ শিকার করতে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেড় জাল। বেড় জালে মাছের ডিমসহ দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় ছোট-বড় মাছ, বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ ওঠে আসে। এতে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময় অর্থের বিনিময়ে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ খোদ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নকারী মৎস্য দপ্তরের বিরুদ্ধে।

মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের শতভাগ চেষ্টারত দাবিদার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস ও নৌপুলিশ ফাড়ির কয়েকশ' গজের মধ্যে বাউশিয়া খেয়াঘাটের উল্টো পাশে পাশাপাশি ৪টি বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে নিয়মিত। পুরো উপজেলা জুড়ে এ রকম বেড় জাল রয়েছে শতাধিক। নিষেধাজ্ঞার মাঝেও প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছেন জানতে চাইলে স্থানীয় বেড় জাল মালিক কালাম মাঝি বলেন, সব কিছু ম্যানেজ করেই করছেন তারা। এখান থেকে ধরা ইলিশ, বেলে ও আইড়সহ বিভিন্ন নদীর মাছ স্থানীয় কয়েকটি বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রিও হচ্ছে। এ ছাড়া এসব মাছ যাচ্ছে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর জেলা ও রাজধানী ঢাকায়। এছাড়াও নিয়মিত মাছ বেচাকেনা হচ্ছে উপজেলার প্রায় ৭০টির বেশি মাছ ঘাটে।

হিজলা উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক রেজাউর রহমান রেজা বলেন, অভয়াশ্রমে মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন ও স্থানীয়দের আরও আন্তরিক হতে হবে। অর্থের লোভে একদল সুযোগ করে দিচ্ছে, আরেক দল মাছ শিকার করছে এটা দুঃখজনক। এসব বিষয়ে হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমের সঙ্গে কথা বলতে তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নাম্বারে কয়েকদিন একাধিক ফোন কল এবং তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে একাধিক মেসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে হিজলা নৌপুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বলেন, 'মার্চ মাসে আমরা যৌথ অভিযানে ২৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছি, যার মধ্যে ১২টি মামলার মাধ্যমে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছি। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় মুচলেকার মাধ্যমে ৪৮ জনকে ছেড়ে দিয়েছি এবং ২২৩ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ৪ হাজার ৩০৫ কেজি মাছ আটক করে বিভিন্ন এতিমখানায় বণ্টন করা হয়েছে। জাতীয় মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি জাকির শিকদার বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা ও তার মাঝিদের অবৈধ অর্থ লেনদেনের কারণেই অভিযান সফল করা সম্ভব হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে