শিশুখাদ্য ফলের জুস তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তবে সেই ফলের জুসে কোনো ধরনের ফলের উপস্থিতি নেই। শুধু বিভিন্ন ধরনে কেমিক্যাল এবং রং ব্যবহার করেই তৈরি করা হচ্ছিল সেসব জুস।
ফরিদপুরে এমনই একটি কারখানায় অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের টের পেয়ে পালিয়ে গেছেন ওই কারখানার মালিক। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভেজাল জুস। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারখানাটি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই ভেতরে কী হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভেতরে কয়েকটি রুমে বসানো হয়েছে মেশিন। সেখানেই চলছে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বিভিন্ন রং ব্যবহার করে জুস তৈরি।
শনিবার শহরের পৌরসভার মাহমুদপুর এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাড়ির দরজা ভেতরে থেকে আটকানো। দরজায় কড়া নাড়ানো হলেও খোলা হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর খোলা হলো দরজা। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল কয়েকজন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তারা বোতলে জুস ভরছেন, কেউ বা প্যাকেজিং করছেন।
নোংরা পরিবেশে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস। জুসের বোতলে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির লেভেল লাগানো হচ্ছে। লিচু, ম্যাংগো জুস ছাড়াও চকোলেট প্যাকেট করা হচ্ছে। পাশাপাশি বোতলজাত করা হচ্ছে আয়ুর্বেদিক অ্যালকুলিসহ বিভিন্ন ওষুধও।
কর্মরত নারী শ্রমিকরা জানান, তারা সকালে আসেন, রাতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পর রাতে তৈরি করা হয় জুস, সকালে এসে তারা বোতলজাত করেন।
তবে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যান কারখানার মালিক মো. লিটন মিয়া। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ভেজাল জুস ও বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেন আদালত।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুজিবুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া আয়ুর্বেদিক অ্যালকুলিসহ বিভিন্ন ধরনের চকোলেট জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে জব্দকৃত মালামাল। এছাড়া কিছু মেশিনারিজ রয়েছে, সেগুলোও জব্দ করা হয়েছে। কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছেন। কারখানার মালিক লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে। এছাড়া অবৈধভাবে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মুজিবুল ইসলাম জানান, শিশুদের খাদ্যে কেমিক্যাল ও রং ব্যবহার করে যারা এ ধরনের জুস ও চকোলেট তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।