টপ সয়েল ধ্বংসের দারপ্রান্তে উত্তরের ফসলি জমি, অন্ধকার বিভীষিকাময় কৃষকদের ভবিষ্যত, অর্গানিক পদ্ধতির ফসল হারিয়ে রাসায়নিকভাবে উৎপাদিত ফসলে ভরপুর উত্তরাঞ্চল। তবুও থামছে না মাটিখোরদের দৌরাত্ম্য। নীরব ভূমিকায় প্রশাসন, উদাসীন কৃষি বিভাগ।
একদিকে ভূমিদসু্য ও মাটিখোরদের অবাধ বিচরণে ফসলি জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমেই চলছে। রোধ করার উপায় থাকলেও তা রয়েছে কৃষকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে মৃত্তিকা গবেষকদের মাধ্যমে কৃষকদের ফসলি জমির মাটির অবস্থা জানার জন্য শতভাগ ব্যবস্থা থাকলেও কৃষি বিভাগের উদাসীনতায় বিষয়টি বেশিরভাগ কৃষকদের এখনো অজানা। নিজের জমির মাটির কোয়ালিটি জানা সম্ভব একথা তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মাটির সঙ্গে কৃষকদের সম্পর্ক তৈরি করতে দেশের বিভিন্নস্থানে রয়েছে মৃত্তিকা গবেষণাগার। তবে কৃষকদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের নিবিড় সম্পর্কের অভাবে ওইসব গবেষণাগারে নেই কোনো কাজের চাপ। অলস সময় পার করছেন বিভাগটির গবেষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
উত্তরের লাখ লাখ কৃষকের জন্য গবেষণাগার রয়েছে মাত্র ৫টি। এগুলো হলো রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, রংপুর ও দিনাজপুরে। এগুলোর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার রয়েছে শুধু রাজশাহী ও বগুড়ায়। বগুড়ার এই ভ্রাম্যমাণ গাড়িটির দায়িত্ব দেওয়া আছে রংপুর বিভাগেও। কৃষকের সংখ্যা অনুযায়ী প্রতিটি জেলা, এমনকি উপজেলা পর্যায়ে গবেষণাগার তৈরি করেও কৃষকের মাটি পরীক্ষার চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। কিন্তু মাত্র ৫টি গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের অলস সময় পার করা মোটেও কাম্য নয় বলে মনে করছেন কৃষিপ্রেমীরা।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক গবেষণাগার বগুড়ার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রতিমাসে কৃষকদের দেওয়া ৫০০-এর অধিক মাটির নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু পরীক্ষার জন্য তাদের এখানে বছরে নমুনা আসে মাত্র এক হাজারের মতো। এগুলোর মধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হয় মাত্র কয়েকশ'। তারা আরও বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জয়পুরহাট ও বগুড়ার কৃষি বিভাগ থেকে মাটি পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২২১টি এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নমুনা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২১৪টি। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কৃষকরা সরাসরি এসে সুবিধা নিয়েছেন ৬২৯ জন, গবেষণাগারের মাধ্যমে ২৭০ জন, ইন্টার্নী শিক্ষার্থীরা ৪৭, গবেষকদের ১৬, এনজিও ১৬৮ ও ভ্রাম্যমাণ গবেষণা করা হয়েছে ৫৬৮টি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের ২১৪, কৃষকদের সরাসরি ৬৯০, ইন্টার্নী শিক্ষার্থী ১২, গবেষণার মাধ্যমে ৩৫ ও এনজিও থেকে করা হয়েছে ৮১টি।
কৃষকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা অলস জীবনযাপন করে। কৃষকরা জানেন না তাদের এলাকায় একজন কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্বে রয়েছেন। মাটি পরীক্ষা তো দূরের কথা ফসলি জমিতে রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন করতে কি প্রয়োজন সেই পরামর্শ নেওয়ার মতো কোনো কর্মকর্তাকে খুঁজে পান না তারা। গত প্রায় দুই মাসে বগুড়ার ১২টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো ঘুরে ওঠে এসেছে উক্ত চিত্র।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, 'মাটি পরীক্ষার জন্য আমরা কৃষকদের একেবারেই জিরো পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছি। মাটি পরীক্ষায় কৃষকরা একেবারেই আগ্রহী না। আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকদের জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করে মৃত্তিকা গবেষণাগারে দিয়ে থাকি।