শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

দাবদাহে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পোল্ট্রি খামারিরা

স্বদেশ ডেস্ক
  ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
দাবদাহে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পোল্ট্রি খামারিরা

তীব্র দাবদাহে খুলনার রূপসা ও পাবনার আটঘড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পোল্ট্রি খামারে ধস নেমেছে। তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে মারা যাচ্ছে খামারের মুরগি। এর ফলে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খুলনার রূপসা উপজেলায় ছোট-বড় ২৪৩টি মুরগির খামার রয়েছে। তার মধ্যে সোনালি ও বয়লার ১৬৪টি এবং লেয়ারের সংখ্যা ৭৯টি। প্রচন্ড দাবদাহে লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারিদের।

দীর্ঘদিনের প্রবাহিত এ তাপপ্রবাহে বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি, স্বাস্থ্য ও পোল্ট্রি খামারে।

প্রায় এক মাস ধরে এ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি প্রবাহমান রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম আর দাবদাহে মারা যাচ্ছে পোল্ট্রি খামারের মুরগি। কমতে শুরু করেছে ডিমের উৎপাদন। আর এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা।

উপজেলার তালতলা গ্রামের পোল্ট্রি খামারি আশিষ দত্ত জানান, তার খামারে ৩ হাজার ২০০ মুরগি ছিল। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে ৬০০ থেকে ৭০০ মুরগি মারা গেছে। কারণ প্রতিটি খামারে টিনের চালা। আর রোদের তাপ টিনে বেশি লাগে। যে কারণে মুরগির গরমও লাগে বেশি। এই গরমে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরমে মুরগি ছটফট করছে। স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। মুরগিকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। গরমে এক লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে।

একই উপজেলার স্বল্পবাহিরদিয়া গ্রামের হানিফ ও ইসরাইলসহ অনেকের খামারে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকের খামারে প্রায় ২ থেকে ৪ হাজার মুরগির রয়েছে। খামারে মুরগি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মচারীরা। কেউ মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করছেন, কেউ বা ডিম সংগ্রহ করছেন। অন্যদিকে খামারের ভেতর ঠান্ডা রাখতে চলছে বৈদু্যতিক পাখা। কিন্তু তাতেও যেন কাজ হচ্ছে না। মুরগিগুলো হাঁসফাঁস করছে গরমে। ভিটেইন ও স্যালাইন খাওয়ানো হয়।

গরমে মুরগির স্ট্রোক ঠেকাতে যেসব ওষুধ ও স্যালাইন ব্যবহার করা হয় তাতে ডিমের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এভাবে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে খামারে লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার মজুমদার জানান, 'তীব্র দাবদাহ থেকে মুরগি বাঁচাতে আমরা খামারিদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ করছি। এছাড়া অফিসে কন্ট্রোলরুম খোলা রয়েছে। কোনো খামারি সমস্যা সম্পর্কে অবগত করলে আমরা তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা ও অনন্যা পরামর্শ দিয়ে থাকি।'

এদিকে আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টানা তিন সপ্তাহের দাবদাহে ও প্রচন্ড গরমে আটঘরিয়ার ৩ শতাধিক মুরগির খামারে হিটস্ট্রোকে প্রায় দেড় হাজার মুরগি মারা গেছে এবং ডিমের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে খামারিরা প্রচুর তির সম্মুখীন হয়েছেন।

রাদাকান্তপুর গ্রামের খামারি মুরাদ জানান, তার খামারে প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোকে প্রায় ১০০ মুরগি মারা গেছে। এছাড়া মুরগির ডায়রিয়া, কলেরা ও মুরগি অসুস্থ হওয়ায় ডিমের উৎপাদন অর্ধেক নেমে এসেছে। খামার কোদালিয়া গ্রামের খামারি শরীফ জানান, মাঝেমধ্যে বিদু্যৎ না থাকায় প্রচন্ড গরমে মুরগি প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে, গরমে মুরগি খাবারও কম খাচ্ছে, উপরন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ায় ডিমের উৎপাদনও অনেক কমে গেছে।

এদিকে খামারিরা এই দুর্যোগ থেকে রার জন্য মুরগির ঘরের শেডের চালের ওপর মোটর পাম্প দ্বারা পানির ঝরনা দিয়ে এবং ভেতরে স্প্রে করছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে বিদু্যতের লোডশেডিং হলে মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। খামারি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বিভিন্ন খামারে প্রায় দেড় হাজার মুরগি মারা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে