শুনতে রূপকথার গল্পের মতো মনে হলেও সত্য। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে, নিয়মিত পাঠদান করানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বই প্রদান করা হলেও হচ্ছে না শিক্ষকের বেতন। বেতন ছাড়া শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন মহাসিন। যিনি খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক দরিদ্র শিক্ষক। নামেমাত্র চাকরি করলেও ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে দুর্বিষহ জীবন পাড়ি দিচ্ছেন মহাসিন।
জানা যায়, স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত বিনাবেতনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। ২২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ও ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঠিকভাবে চলছে। শিক্ষকতার ২৪টা বছর কেটে গেলেও পাচ্ছেন না বেতন শিক্ষক মহাসিন।
বামনডাঙ্গা গ্রামের মিনাপাড়ার মৃত ইউনুস মিনার ছেলে মহাসিন মিনা। মেধাবী এই ছেলেটি দরিদ্র বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে পড়াশোনা করে অনার্স পাস করে যোগদান করেন গ্রামের এই স্কুলে। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন বলে সব কিছু ছেড়ে গ্রামের স্কুলে বিনাবেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৯৯৭ সালে স্কুলটি গেজেটভুক্ত (জাতীয়করণ) করা হয় এবং সব শিক্ষক-কর্মচারী ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত করা হলেও শিক্ষক মহাসিন মিনা এখনো পর্যন্ত গেজেটভুক্ত হননি। ফলে সবাই বেতন পেলেও আজও তিনি পাননি কোনো বেতন কাঠামো। এ যেন সবাই তার নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ত, কারও কোনো কিছু দেখার সময় নেই। একজন দোষ দিচ্ছেন আরেকজনের ওপর, আদৌ তার চাকরিজীবনে বেতন পাবেন কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
এ বিষয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন দত্ত বলেন, সাবজেক্ট জটিলতার কারণে তার বেতন এখনো চালু হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবেদন করা আছে। কবে এটা অনুমোদন দেবে এ বিষয়ে সঠিক বলতে পারছেন না কেউ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইরিন পারভিন বলেন, আমি বিষয়টি আগেও শুনেছি। প্রধান শিক্ষককে বলেছি যেন দ্রম্নত এটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।