অনুকূল আবহাওয়ায় পাহাড় ও হাওড়ে বোরোর অধিক ফলন
প্রকাশ | ০১ মে ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
এবারের প্রচন্ড খরাতেও তাহার রাঙামাটির পাহাড়ে ও হাওড়াঞ্চল নেত্রকোনায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সেখানকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে পার্বত্যাঞ্চলে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় শুরু হয়েছে সংগ্রহও। তবে কৃষকরা বলছেন, ফলন ভালো হলেও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় আগাম ধান কাটতে হচ্ছে।
এছাড়া অনেক জায়গায় ধানের ভালো দাম পাওয়া গেলেও কিছু কিছু জায়গায় তা মিলছে না। অতিরিক্ত গরমে ধান কাটাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বোরো ধান হয় শুষ্ক মৌসুমে। হেমন্তকালের শুরু থেকে গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এর সময়কাল ধরা হয়। তীব্র লবণাক্ত জমিতেও বোরোর ভালো উৎপাদন হতে দেখা যায়। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ আবাদি জমিতে এরই মধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।
এ অঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, এবার বোরো ধানের অধিক ফলন হয়েছে। তবে দামের ব্যাপারে শঙ্কাও জানিয়েছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, প্রায় প্রতিবছরই ফসল ঘরে তোলার পর ধানের দাম কমে যায়। এবারও তেমন হলে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা। এদিকে উপজেলায় তীব্র গরমে ধান কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে লংগদু উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৫০ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে এর চেয়েও ৩শ হেক্টর বেশি অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৮শ' হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সরকারিভাবে প্রণোদনাসহ সময়মতো সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। সামনে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হলে দামও কিছুটা বাড়বে বলে দাবি তাদের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) বোরো উৎপাদনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে দুই কোটি সাত লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে, যা ছিল আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি।
কৃষিবিদরা বলেছেন, জেনেটিক গেইন বৃদ্ধি, অনাবাদি জমি চাষ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে প্রধান এই খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।
এদিকে, স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোনা জানিয়েছেন, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারায় কৃষকের মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক। নেত্রকোনা মূলত ধান উদ্ধৃত জেলা। এই জেলায় উৎপাদিত ধান স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। গত বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্যাপক চিটা দেখা দেওয়ায় মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষে পরামর্শ দেন। তাই এবার হাওড়াঞ্চলে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোন ধরনের রোগবালাই না দেখা দেওয়ায় হাওড়ে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এবার জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদিত হবে, তা থেকে ৮ লাখ ২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
হাওড়াঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, ও কলমাকান্দা উপজেলায় ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান দ্রম্নত পেকে যাচ্ছে। আগাম বন্যা, ঝড়-শিলাবৃষ্টি না থাকায় প্রচন্ড রোদে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ধান টাকা, মাড়াই ও শুকিয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল গোলায় তুলতে পারছেন।
বিভিন্ন হাওড়াঞ্চল ঘুরে জানা যায়, কৃষি কাজে যান্ত্রিকীকরণের কারণে হাওড়াঞ্চলে এবার শ্রমিক সংকট নেই। মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতাসহ বেশিরভাগ হাওড়ে কৃষকরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রম্নত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষিরা বছরের খোরাকির জন্য ধান সংরক্ষণ করছেন। কৃষকের বাকি ধান হাওড়ের জমি থেকেই ফরিয়া দালালরা কিনে নিচ্ছেন।
শেহড়াতলী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছি। আমার ৮০ কাঠা ক্ষেতে ৬০০ মণ ধান হয়েছে।
খালিয়াজুরীর বলস্নভপুর গ্রামের সঞ্জিত সরকার বলেন, আমার জমিতে যে পরিমাণ ধান পেয়েছি, তা দিয়ে সংসারের ভরণ-পোষণসহ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারব।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন হাওড়াঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় সার-বীজ ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খুব কম সময় মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা ও মাড়াই করা হয় বলে কৃষকরা তাদের বোরো আবাদ সহজেই ঘরে তুলতে পারছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, এ বছর যথাসময় জেলার হাওড়াঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। ফলে হাওড়ে এবার আগাম বন্যায় বোরো ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, চলতি সপ্তাহে হাওড়াঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা যাতে দ্রম্নত সময় ধান কেটে সহজে ঘরে তুলতে পারেন, এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওড়াঞ্চলে ৭৫ ভাগ ও উঁচু এলাকার ২০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।