ব্রয়লারের চেয়ে চাহিদা বেশি

পঞ্চগড়ে 'বাউ' মুরগি পালন করে খুশি খামারিরা

প্রকাশ | ০১ মে ২০২৪, ০০:০০

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বাকৃবি গবেষকদের উদ্ভাবনকৃত 'বাউ' মুরগির খামার -যাযাদি
দেখতে হুবহু দেশি মুরগির মতো হলেও শারীরিক বৃদ্ধি ব্রয়লার বা বিদেশি কোনো জাতের মুরগির মতোই। এমন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। এই মুরগিই এবার ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। এই মুরগি পালন করে সফল হয়েছেন অনেক খামারি। মাত্র ৪০-৪২ দিনে এই মুরগির ওজন এক কেজি ছাড়িয়ে যায়। সারাদেশের মতো পঞ্চগড়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মুরগি। জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছেও এই মুরগি 'বাউ' মুরগি নামেই পরিচিত। ইতোমধ্যে তাদের কাছে নতুন আস্থার জায়গা তৈরি করেছে নতুন জাতের এই মুরগি। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় এখন অনেক খামারি ব্রয়লারসহ অন্যান্য জাতের মুরগির পরিবর্তে বাউ মুরগিকেই বেছে নিচ্ছেন। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের সোনাপোতা গ্রামের বাউ মুরগির খামারি প্রদীপ রায় জানান, 'পলস্নীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে ও শার্পের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে খামার করার জন্য ১৫০টি মুরগি নিয়েছিলাম। মাত্র ৪৫ দিনেই গড় ওজন প্রায় এক কেজি ৩০০ গ্রাম হয়েছে, যা বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় দুই হাজার বাউ মুরগি রয়েছে।' দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোছা. সারাবন তহুরা বলেন, ব্রাউ ব্রো বা বাউ মুরগি পালন করে এই উপজেলার অনেকেই লাভের মুখ দেখেছেন। খেতেও দেশি মুরগির মতোই স্বাদ। এই মুরগিতে রোগ-বালাই খুবই কম হয়ে থাকে। সেলফ-হেল্প অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প)'র প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, বাউ মুরগি এখন সবার কাছেই পরিচিত। খেতে সুস্বাদু, মৃতু্যহার কম, উৎপাদন বেশি হওয়ায় খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে এর চাহিদাও অনেক। পলস্নী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই মুরগি লালন-পালনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। রাজারহাটে জি-৩ রুই রেণুপোনা উৎপাদনে লাভবান মাছচাষি ম রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি কুড়িগ্রামের রাজারহাটে মৎস্যচাষি ফারুক মন্ডল পাঁচ হাজার টাকায় জি-৩ রুই মাছের রেণু কিনে এখন রেণুপোনা বিক্রি করে লাখপতি বনে গেছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় রংপুর থেকে উন্নতজাতের ৫০০ গ্রাম রেণু সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ছয় মাস পর আঙ্গুল সাইজের রেণুপোনা ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সুস্বাধু ও ৬-৭ কেজি ওজন পর্যন্ত এই রুই পুকুরে দ্রম্নত বৃদ্ধি পায়। ফলে মৎস্যচাষিরা এই পোনা চাষ করে ভাগ্যবদলের চেষ্টা করছেন। জানা যায়, এতদিন পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষ করে আসছিলেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাফাডাঙ্গা গ্রামের মৎস্যচাষি উমর ফারুক মন্ডল। উন্নতজাতের জি-৩ রুইপোনার সন্ধান পান রংপুরে। গত সেপ্টেম্বরে সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকায় ৫০০ গ্রাম রুই মাছের রেণু কেনেন। আড়াই থেকে তিন লাখ রেণপোনা উৎপাদন হয়। চলতি এপ্রিল মাসে আঙ্গুল সমান ২৮৬ কেজি রেণুপোনা ৩৫০ টাকা দরে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করেছেন। আরও ৮০০ কেজি বিক্রি করতে পারবেন। এ ছাড়াও পোনাগুলো এক বছর পুকুরে রাখতে পারলে আরও বেশি লাভবান হবেন। তার পুকুরের রুইপোনার গ্রোথ দেখে অনেক মৎস্যচাষি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে মৎস্যচাষি ফারুক বলেন, এই মাছ দ্রম্নত বাড়ে ও লাভজনক। ৫০০ গ্রাম রুইপেনা উৎপাদনে খাবার ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। এই মাছ বিক্রি করলে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাভ আসে। রংপুর আরডিআরএস'র সমন্বিত কৃষি ইউনিটের টিম লিডার বিদু্যৎ কুমার সাহা বলেন, সাধারণ রুই মাছের তুলনায় এর গ্রোথ ৩০ গুণ বেশি। আমরা বিনামূল্যে এই রেণুপোনা সরবরাহ করছি। যাতে কুড়িগ্রামে মৎস্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, হালদা-পদ্মা ও যমুনার রুইয়ের মধ্য থেকে জিনগতভাবে সর্বোৎকৃষ্ট মাছের প্রজননের মাধ্যমে এই রুই উদ্ভাবন করা হয়েছে। আর এ কারণে জি-৩ রুইয়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ রুইমাছের চেয়ে বেশি। এটি প্রতিকূল পরিবেশেও ভালো বেড়ে উঠে।