পুরোদামে চলছে ধান কাটা

ভৈরব বন্দরে প্রতিদিন আসছে কয়েক হাজার মণ নতুন ধান

দাম কমায় হতাশ কৃষক

প্রকাশ | ০১ মে ২০২৪, ০০:০০

সত্যজিৎ দাস ধ্রম্নব, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
নতুন ধান আসায় ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিতিতে প্রাণ চঞ্চল উত্তর পূর্ব হাওড়াঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধান-চালের মোকাম ভৈরব বন্দর -যাযাদি
ভৈরবসহ হাওড়াঞ্চলে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। দেশের উত্তর-পূর্ব হাওড়াঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ধান চালের মোকাম ভৈরব বন্দরে আসছে নতুন ধান। ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে এই মোকাম। অন্য বছরের তুলনায় ধানের দাম অনেক কম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ধানে প্রতি মণে কমেছে ১০০ টাকা। উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ায় কৃষকরা খুশি নন। কিছুদিন আগেও দাম অনেক বেশি ছিল। বাজারে ধান আসতেই দাম অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হয়রানির কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে কৃষকরা আগ্রহী নন। তাই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত তারা। ভৈরবের মোকামগুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একাধিক ধান বোঝাই নৌকা সারি সারিভাবে ঘাটে নোঙ্গর করা। সব নৌকাই হাওড় থেকে এসেছে। শ্রমিকরা নৌকা থেকে ধান খালাস করে ঘাটে স্তূপাকারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখছেন। এসব ধান ঘাটে ও নৌকায় রেখেই কেনাবেচা হয়ে থাকে। এবার ভৈরবসহ হাওড়াঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওড়াঞ্চলের উৎপাদিত প্রায় বেশিরভাগ ধানই বেচাকেনা হয় ভৈরব মোকামে। আবার মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম, চাঁদপুর, চট্রগ্রাম, আশুগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার রাইসমিল মালিকরা ভৈরব বাজারে নতুন ধান কিনতে আসেন। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ হীরা ধান (মোটা ধান) ৭০০-৭৪০ টাকা। আর চিকন ধান (২৮ ও ২৯ জাতের ধান) ৮০০-৯০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের আগে এসব ধানে দাম প্রতি মণে ১০০ টাকা বেশি ছিল। ভৈরবের আগানগরের কৃষক পাষান আলী বলেন, ধান উৎপাদন করতে সার, বীজ, জ্বালানি, কীটনাশক ব্যবহার ও শ্রমিক খরচ বেশি হওয়ায় ব্যয় বেশি। কিন্তু ধানের বাজার মূল্য অনেক কম। উৎপাদন খরচের সঙ্গে ধানের বাজার মূল্য সমন্বয় করে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ের দাবি তার। নাসিরনগরের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, 'ফলন ভালো হলে কি হবে, দাম তো কম। উৎপাদন খরচই উঠবে না। খাব কি আর সারাবছর চলব কীভাবে।' আজমেরীগঞ্জের কৃষক রহিম মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে ১০০ মণ ধান ৮২০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম এই মোকামে। আজ দেখি ৭২০ টাকা। সব জিনিসের দাম বাড়ে আর ধানের দাম কমে। গঙ্গা-যমুনা ট্রেডার্সের মালিক সত্য সাহা বলেন, এবার কৃষকদের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওড় এলাকায় এখন পুরোদমো ধান কাটা চলছে। এসব এলাকা থেকে নৌকাযোগে বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত ধান মোকামে আসছে। তাই বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি হচ্ছে। তবে সে তুলনায় মোকামে খরিদদার কম থাকায় ধান বিক্রি করতে পারছেন না তারা। বর্তমানে ধানের বাজারে মোটা ধান প্রতি মণ ৭২০-৭৪০ টাকা দরে ও চিকন ধান প্রতি মণ ৮০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ঘাটের মাটি ফেলে ধান রাখার জায়গা নষ্ট করে রেখেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। অনেক নৌকা আশুগঞ্জ ঘাটে চলে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের থেকে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের বাঁচাতে সরকার শুরু থেকে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সুফল পাবে। ভৈরব বাজারের ধানের আড়তদার কিশোর কুমার জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ধানে দাম অনেক কম। কৃষকরা অনেকটা বাধ্য হয়ে ধান বিক্রি করছে। ফলে আগামীতে কৃষি অর্থনীতিতে এর বিরুপ প্রভাব পরবে। ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হুমায়ুন কবীর জানান, বন্দর নগরী ভৈরব ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী স্থান। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে ভৈরব মোকামে হাওড় এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান আমদানি হয়ে থাকে। এই ধান বিভিন্ন চাতাল মিলের মালিক কেকেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক ভালো ফলন পেয়েছেন। তাই বাজারেও পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ রয়েছে। তবে নতুন ধান প্রতি মণ ৭৫০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলে কৃষকরা লাভবান হবেন না।