সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসা আর প্রাকৃতিকভাবে দেশি-বিদেশি ফলফলাদি উৎপাদনের লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর যাবৎ মিশ্র চাষাবাদে মনোনিবেশ করেছেন নারী উদ্যোক্তা তানিয়া আশরাফ ইসলাম। ইট-পাথরের নগরীতে লেখাপড়া আর বিলাসী জীবন-যাপনে বেড়ে ওঠা হলেও একজন নারী কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বিশাল পাহাড় টিলায় বিদেশি ফল ড্রাগন এবং নানা প্রজাতির ফলজ বাগান করে চমকে দিয়েছেন অন্য নারীদেরও!
শহরের বিলাসী জীবন-যাপন ফেলে দিনের পর দিন একাকী রাত যাপনসহ শ্রমিকদের পাশাপাশি নিজেও পরিচর্যা করছেন বাগানের। নিজের শখ আর স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি এই জনপদে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ও মিশ্র ফলজ বাগান গড়ে তোলার মাধ্যমে স্থানীয় শত শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন উপজেলার তিনটহরী এলাকার বাসিন্দা উচ্চশিক্ষিত এই সাহসী নারী উদ্যোক্তা। ২০১৭ সালে উপজেলার বড়টিলা এলাকায় লিজ নেওয়া ৩ একর টিলা ভূমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগনের বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে লাগানো ৪ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ থেকে ফলন তুলেছেন বেশ কয়েকবার।
এছাড়া উপজেলার কুমারী এলাকায় নিজ ভূমির ১৩ একর পাহাড়ে বিশাল পরিসরে আরও ৮ হাজার ড্রাগনের চারা, কিউজাই, কিংচাকাপাত, ব্যানানা ও সূর্যডিমসহ নানা জাতের আম, লিচু, বরই, মাল্টা, কমলা, এভাকেডো, রামবুটান, থাই লংগান, সফেদা ও আতাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের মিশ্র চাষাবাদ শুরু করেছেন। পাশাপাশি 'হিল টপ গ্রোভস অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট লিমিটেড' নামে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, 'পাহাড়ি মাটিতে ড্রাগনসহ উৎপাদিত ফলের সুমিষ্টতা অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। অর্গানিক ড্রাগন কখনো ৩০০-৪০০ গ্রামের বেশি হবে না। শুধু টনিক বা হরমোন ব্যবহারে ড্রাগন ৫০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে হবে! তবে আমি চাই আমার বাগানে উৎপাদিত বিষমুক্ত অর্গানিক ফল সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে।'
রিসোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, 'এখানে একটি ফলের বাগানে রিসোর্ট করা হবে, যেখান থেকে বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মতো ফলের বাগানে রিসোর্টের আনন্দ এবং পাহাড়ের ওপর এডভেঞ্চারাস লাইফ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে মেঘের রাজ্য সাজেক যাতায়াতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মাঝপথে বিরতির কোনো সুব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে আমার বাগানে রিসোর্ট গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।'