শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

৩৩ বছরেও অরক্ষিত ডাঙ্গারচর-শিকলবাহা!

জাহাঙ্গীর আলম, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে জুলধা ইউনয়িনের ডাঙ্গারচরে স্থানীয়দের অর্থায়নে নির্মিত বেড়িবাঁধ -যাযাদি

১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ডাঙ্গারচর গ্রাম থেকে নিহত হয় ৫ শতাধিক মানুষ। কর্ণফুলীর নদীর তীরবর্তী এই এলাকাটি সম্পূর্ণ ডুবে যায় পানিতে। সেই ভয়াল দিনের ৩৩ বছরেও গড়ে ওঠেনি দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র ও টেকসই বেড়িবাঁধ। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আতংকে কাটে উপকূলে বসবাসরত জুলধা ডাঙ্গারচরের প্রায় ২২ হাজার মানুষের। একই সঙ্গে শিকলবাহা, বড়উঠান ও চরলক্ষা ইউনিয়নেও অরক্ষিত রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নতুন প্রকল্প অনুমোদন হয়ে এসেছে। অর্থ পাওয়া গেলেই কাজ শুরু হবে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ সেই জলোচ্ছ্বাসে কর্ণফুলী থেকে মারা যায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। আর ডাঙ্গারচর একটি গ্রাম থেকে মারা যায় পাঁচ শতাধিক মানুষ, বিলীন হয়ে যায় হাজার হাজার বাড়িঘর। সেই স্মৃতি এখনো ভুলেনি তারা। বেড়িবাঁধ না থাকায় ও পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের অভাবে এ অঞ্চলে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি ঘটেছিল বলে দাবি এলাকাবাসীর। বিগত ৩৩ বছরে একাধিকবার ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ারের পানিতেও এই এলাকা পস্নাবিত হয়েছে, প্রতি বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বর্তমানে বড়উঠান, জুলধা, চরলক্ষা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত। তবে বিদ্যমান জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও ২০-৩০টি সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজন উপজেলায়।

কর্ণফুলী উপজেলার ডাঙ্গারচর এলাকার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম হৃদয় (৪৫) বলেন, '৯১ সালে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জুলধা-ডাঙ্গারচর এলাকার। বিগত সময়ে নদীর পাড় ভেঙে গ্রামের অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায়। এখন নদী প্রায় আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। এখনো টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। গ্রামবাসী নিজেদের অর্থায়নে মাটি দিয়ে একটি বাঁধ দিলেও তা স্থায়ী নয়। বেড়িবাঁধ দিয়ে নদীর ভাঙন ঠেকানো না গেলে হয়তো একদিন আমাদের বাড়িঘরও বিলীন হয়ে যাবে।

এদিকে ২০১৮ সালে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৫৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ আসলেও এখনো জুলধা ও শিকলবাহা ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে পারেনি। ৫ কিলোমিটারের অধিক এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় শঙ্কায় বসবাস করছেন উপকূলের অর্ধলক্ষ হাজার মানুষ।

শিকলবাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিকলবাহা ইউনিয়নের তিন কিলোমিটার অংশে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। কয়েকবার মাটির বাঁধ দিলেও সেটা অনিয়মের কারণে শুরু হয়নি। বর্ষার আগে নতুন করে বাঁধ না দিলে পুরো এলাকা তলিয়ে যাবে। বিষয়টি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানকে অবহিত করা হলে তিনি বাঁধ নির্মাণে আশ্বস্ত করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপ-প্রকৌশলী মিজানুল হক বলেন, আনোয়ারা-কর্ণফুলীর জন্য নতুন করে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে ওই কাজ শুরু হবে।

কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, জুলধা, চরলক্ষা, চরপাথরঘাটা, বড়উঠান ও শিকলবাহা ইউনিয়নে খাল খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। কিন্তু বরাদ্দের টাকা না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। প্রকল্পের অর্থ পাওয়া গেলে দ্রম্নত কাজ শুরু হবে।

উলেস্নখ্য, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে কর্ণফুলী উপজেলা থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিলীন হয়ে যায় হাজার হাজার বাড়িঘর। দিনটি উপকূলের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এ উপলক্ষে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতিবছরের মতো এবারও ঘরে ঘরে মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি, স্মরণ সভা ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয়রা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে